একনজরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপের দেশগুলোর একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অভিন্ন মুদ্রা, সদস্য দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসাহীন চলাচলের সুযোগ, সীমান্তবিহীন বাজারব্যবস্থা, অভিন্ন কৃষিনীতি, পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তানীতি প্রণয়ন প্রভৃতি লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয় ইইউ। এর বেশির ভাগ সদস্যদেশই সেন্ট্রাল ইউরোপ ও পূর্ব ইউরোপের। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়ক সংগঠন। বাজেট প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে এর একটি বড় অংশ। ইউরোপীয় আদালত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মীমাংসাকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করেন। ইউরোপীয় নিরীক্ষা সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাব নিরীক্ষণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। রাজনৈতিক আশ্রয়, অভিবাসন, মাদক ও সন্ত্রাসবাদ নিয়েও সংগঠনটির নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। মূলত সংস্থাটি ইউরোপে শান্তি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নের লক্ষ্যে গঠিত হয়।

সদস্য : অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইরিশ প্রজাতন্ত্র, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালটা, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য-এই ২৮টি দেশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত।
European-Union 1

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত : ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিলে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ-এই ছয়টি দেশ প্যারিস ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত সাধারণ বাজার প্রতিষ্ঠা চুক্তি অর্থাৎ প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৫২ সালের ২৫ জুলাই ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত সাধারণ বাজার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ উপরোক্ত ছয়টি দেশ রোমে ইউরোপীয় সাধারণ অর্থনৈতিক বাজার ও ইউরোপীয় আণবিক শক্তি সাধারণ সংস্থার প্রতিষ্ঠা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটি রোম চুক্তি হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৫ সালের ৮ এপ্রিল ছয়টি দেশের স্বাক্ষরিত ব্রাসেলস চুক্তি অনুযায়ী তিনটি কমিউনিটির সংগঠনকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এটিকে সাধারণত ইউরোপীয় কমিউনিটি বলা হয়। ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই ব্রাসেলস চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে ইউরোপীয় কমিউনিটি মাসটেরিহ্যাট নেতা সভা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক মুদ্রা ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় রাজনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আরেক নাম হচ্ছে মাসটেরিহ্যাট চুক্তি। ১৯৯৩ সালের ১ নভেম্বর এ চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। তখন থেকে ইউরোপীয় কমিউনিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাম ধারণ করে।

European-Union 2

কার্যক্রম : ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সমষ্টিগতভাবে কাজ করে থাকে। এর মূল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-ইউরোপিয়ান কাউন্সিল, যেটি সদস্য দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের নিয়ে গঠিত। এটিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারক ও চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। এর প্রধান প্রেসিডেন্ট। বছরে কয়েকবার সদস্যদের মিটিং বসে। সদস্য দেশগুলোর ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো ইউরোপিয়ান কমিশন। এটি সবার সাধারণ স্বার্থ নিশ্চিত করে থাকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি দেশ থেকে একজন করে কমিশনার নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তাঁদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কাউন্সিল। এটি কাউন্সিল অব মিনিস্টার নামে পরিচিত, যা ২৮টি দেশের জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিকদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও নতুন সদস্য দেশ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ : আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি শক্তি। অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে ইউরো জোনের অর্থনৈতিক সংকট ইইউয়ের ভূমিকাকে সংকুচিত করে দিয়েছে। গ্রিসের ঋণ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে আগে থেকেই। এখন এর সঙ্গে যোগ হলো ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কি না, তা যাচাই করে দেখার জন্য ২০১৭ সালে একটি গণভোটের আয়োজন করবেন। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় তিনি এই গণভোটটি ২০১৬ সালেই করতে চান। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারের কাজটি অত সহজ নয়। একটি দেশের সমস্যায় অন্য দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে ইউরোর ভবিষ্যৎ নিয়ে। অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সংকট যদি ইইউ কাটিয়ে উঠতে না পারে, তাহলে এটা বলা যায়, আগামী এক দশকের মধ্যে এক ভিন্ন ইউরোপের চেহারা দেখা যাবে।

একনজরে

সদর দপ্তর : ব্রাসেলস

সদস্য সংখ্যা : ২৮

সরকারি ভাষা : ২৪টি

কমিশনের প্রেসিডেন্ট : জঁ-ক্লদ জাংকার

পরিষদের প্রেসিডেন্ট : ডোনাল্ড টাস্ক

আইন প্রণয়নকারী সংগঠন : পরিষদ ও পার্লামেন্ট

নোবেল পুরস্কার লাভ : ২০১২

অভিন্ন ইউরো মুদ্রা চালু : ১৯৯৯

ইউরো মুদ্রার জনক : রবার্ট মুন্ডেল (কানাডা)

সর্বশেষ ইউরো মুদ্রা গ্রহণকারী দেশ : লিথুনিয়া (১৯তম)

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তর : ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি

সূত্র: কালের কণ্ঠ