“ভারত বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালালে পুরো বাংলাদেশ সরকার, প্রশাসন এবং সব শহরাঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সময় লাগবে মাত্র দু সপ্তাহ। বা হয়তো এর চেয়েও কম। আর বাংলাদেশে সামরিক সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়ার মাত্র তিন দিনের মধ্যেই ভারত ব্যাপক এবং পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষমতা রাখে।”
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের এক অস্থির রাজনৈতিক সময়ে তৈরি করা এক গোপন দলিলে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এভাবেই ভারতের সামরিক সক্ষমতার পর্যালোচনা করেছে। সম্প্রতি সিআইএ যেসব গোপন দলিল সর্ব-সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সংক্রান্ত এসব দলিলও।
এই দলিলটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখ। এর শিরোনাম ছিল “ইন্ডিয়ান মিলিটারি ক্যাপাবিলিটিজ ফর ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ” বা বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের জন্য ভারতের সামরিক সক্ষমতা”। ঠিক ঐ ২৬শে নভেম্বর সকালেই ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার সমর সেনকে অপহরণের চেষ্টা করে জাসদের গণবাহিনীর একদল সশস্ত্র সদস্য।
ভারত আসলেই বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের কথা ভাবছিল কিনা, অথবা সেসময় বাংলাদেশে যারা ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন, তাদের মধ্যে এরকম কোন আশংকা ছিল কিনা, সিআইএ’র এই দলিলে এ সম্পর্কে কিছু নেই।
এর শুরুতেই একটি নোটে বলা হয়েছে “এটি একটি সামরিক সক্ষমতার সমীক্ষা মাত্র। এতে ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বা এ ধরণের হস্তক্ষেপ কি রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হতে পারে সে সম্পর্কে কোন কিছু অনুমানের চেষ্টা করা হয়নি।”
তবে এর আগে ৮ই নভেম্বরের একটি দলিলে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপের আশংকা বাড়ছে।
সিআইএর পরিচালকের দফতর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো ঐ রিপোর্টে বলা হয়, “বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরের অবস্থার অবনতি ঘটছে। যদি দ্রুত সামাল দেয়া না যায় এটা গৃহযুদ্ধে পর্যন্ত রূপ নিতে পারে এবং সীমান্তের ওপারে ভারতের দিকে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে। এবং এর ফলে ভারত খোলাখুলি সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা