কোটা ১০ শতাংশে আনতে সাত দিনের‘আল্টিমেটাম’প্রধানমন্ত্রীকে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সাত দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য চেয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের থাকা আন্দোলনকারীরা। যতদিন এই ঘোষণা না আসবে ততদিন কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা। কোটা কমিয়ে কত শতাংশ করা হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বক্তব্য চাইলেও তা কমিয়ে ১০ শতাংশ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানানো হয়েছে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা হাসান আল মামুন।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটা আছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ। এর বাইরে জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে এবং প্রতিবন্ধী কোটা আছে এক শতাংশ।নানা সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন হলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পিছু হটেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। তবে এবার তারা আন্দোলনে নেমেছে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে। এই আন্দোলনের পক্ষে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে যেসব লেখালেখি করা হচ্ছে সেখানেও প্রধানত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েই কথা হচ্ছে।
রোববার শাহবাগ মোড়ে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের হটিয়ে দিতে পুলিশের চেষ্টার পর তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। আর পরদিন দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন বিকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন এক মাস স্থগিত করার ঘোষণা আসে।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই আবার আন্দোলনে ফেরার ঘোষণা আসে। আর বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের নেতা হাসান আল মামুন বলেন, ‘সরকারের একেক নেতা একেক ধরনের কথা বলে। তাদের কথা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য চাইছি কত শতাংশ কোটা সংস্কার করবে।’, ‘আমাদের দাবি এটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এ জন্য সরকারের তিনটি কমিশনের হিসাব নিকাশের বিষয় আছে। এটা বিবেচনা করে আমরা সাত দিন সময় দিচ্ছি।’
এই সাত দিন আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এলে আন্দোলন প্রত্যাহার করব।’তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও দাবি অনুযায়ী যতদিন কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
কর্মসূচি স্থগিত করার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফেরার কারণ দুই জন মন্ত্রীর বক্তব্য। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানোর দাবির তীব্র সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী, যারা লড়াই করে, জীবন দেয়, জীবনকে বাজি রাখে তাদের জন্য সুযোগ রাখে। এটা নতুন কিছু না। যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের ছেলে মেয়ে কিংবা বংশধরদের আরেকটি সিঁড়ি সুযোগ পাবে না? ওই রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কোটা সংকুচিত করতে হবে?’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটি এলিট শ্রেণি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের মফস্বলের কলিমুদ্দিন, সলিমুদ্দিনের ছেলে মেয়েরা উপরে উঠতে না পারে।’
আন্দোলনকারীরা ধরে নিয়েছেন মতিয়া চৌধুরী তাদেরকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। আর সোমবার সকালে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় তারা। পরে তারা আবার আন্দোলনে ফেরার ঘোষণা দেয়।
আবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কোটা সংস্কারের জন্য তিনি নিজেও প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই কাজ করতে বাজেট পার হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রীকে মারধর করার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ইশরাত জাহান এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।