‘হাসিনার কথা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না’: এরশাদ
একটা কথা আছে আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই নড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন, ‘হাসিনার কথা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না’। ‘কিছুই হয় না। প্রশাসন চলে না। এখন সর্বত্র শুধু দলীয়করন। ব্যাংক খালি। ব্যাংকে টাকা নাই। লুটপাট করা হয়েছে। পানামা পেপারে সব নেতার নাম আছে। দেশের টাকা পাচার করা হয়েছে। তাদের কোন বিচার নাই’। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
রোববার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে অস্থির হয়ে গেছে। মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা শুন্য। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা নির্বাচিত হতে পারবে না। নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ হারে তাহলে তাদের কোন নেতার গায়ের চমড়া থাকবে না। তাই জাতীয় পার্টিকে অবহেলা করবে না। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগে ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করার জন্য নয়, নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শরীক থাকতে চায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চেয়ে এই সরকারের আমলে বেশী নারী নির্যাতন হচ্ছে দাবী করে এরশাদ বলেন, দেশে এখন নারী নির্যাতন একটা খেলায় পরিনত হয়েছে। যেন দেশে মহিলা হয়ে জন্ম গ্রহন করাই অপরাধ। গত দুই মাসে ২৮৭ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছে। শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে। আমরা সবাই ধর্ষিত হচ্ছি। স্কুলে যাওয়ার পথে শিশু ও কিশোরীদের ধর্ষন করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পিতামাতারা বাল্য বিয়ে দিচ্ছেন। যে সরকার মা-বোনদের ইজ্জত করতে পারে না। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এধরনের নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনা কখনও ঘটে নি।
এরশাদ বলেন, বিএনপি না আসলে আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করবো। দেশের মানুষ দুই দলকে চায় না। জাতীয় পার্টি ছাড়া কিছুই হবে না।
এরশাদ বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। সেখান থেকে কয়েকটা পাথর সরে গেছিল। আবার সে পাথর নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। ৯১ সালে আমাদের সহযোগিতা নিয়ে বিএনপি ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু তারা জাতীকে দুর্নীতি আর দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। বৃহত্তর রংপুরের ২২ টি আসন আপনারা আমাকে উপহার দেন। আমরা ক্ষমতায় যাবো।
এরশাদ বলেন, আমার উপর অত্যাচার করে কেউ টিকতে পারে নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম। ৬ বছর জেলে ছিলাম। একলা ছিলাম। ১২ টি ঈদ করতে পারি নি। হাসপাতালে নেয়া হয়নি। আমি মারা যাবো বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি মরি না। আমার এই বয়সে কেউ নেই। এটা আল্লাহর রহমত।
এরশাদ নিজের আমলে করা উন্নয়নের চিত্র তুলে দরে বলেন, আমি ৪৬০ টি উপজেলা করেছিলাম। উপজেলায় আদালত করেছিলাম। ডিভিশনে হাইকোর্ট করেছিলাম। সব খালেদা জিয়া বাতিল করেছেন। আমি ঋনের সহজ নীতি করেছিলাম।১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা করেছিলাম। যমুনা সেতু করেছিলাম। ১ ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৮৮ সালে ভিত্তি প্রস্তুর দিয়েছিলাম। বিশ্ব ব্যাংকে বলেছিলাম, টাকা দাও, ওরা বলেছিল তোমরা গরীব মানুষ টাকা শোধ করতে পারবে না। তার পর আমি সারসার্জ ধার্য করে টাকা সংগ্রহ করেছিলাম।
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, রংপুর সিটি মেয়র ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব) খালেদ আক্তার, প্রাইম-সনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. আক্কাস আলী সরকার, সালাহ উদ্দিন এমপি, শওকত আলী চৌধুরী এমপি, শাহানারা বেগম এমপি, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ফখর উজ-জামান জাহাঙ্গীর, মহানগর সেক্রেটারী এসএম ইয়াসির, পীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি নুরে আলম যাদু, বদরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি আসাদুজ্জামান সাবলু চৌধুরী, গঙ্গাচড়া উপজেলা সভাপতি সামসুল আলম। কাউনিয়া উপজেলা সভাপতি শাহ মাহবুবুর রহমান, কাউনিয়া উপজেলা সেক্রেটারী মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।