পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন এমন ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করায় তাঁর বিরুদ্বে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি। রিজভী বলেন, তারেক রহমান যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে তা প্রদর্শনের চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
গত শনিবার যুক্তরাজ্য সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনা সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন।প্রতিমন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া।…সেই তারেক রহমান কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে?’
পরদিন বাংলাদেশের দু’একটি জাতীয় দৈনিকে এই সংবাদ প্রকাশ হয়। আর সোমবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানান দলের মুখপাত্র রিজভী।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘কাল্পনিক, ভিত্তিহীন’ দাবি করে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন। হাইকমিশন তো সরকারের অধীন, তাদের বলুন সেটি দেখাতে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে এমন কথা বলেছেন দাবি করে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা-আত্মা বিক্রির সমতুল্য।’পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দেন রিজভী। বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশে তারা (জিয়া পরিবার) কোন নাগরিকত্ব গ্রহণও করেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে উড়ো, অবান্তর কথা বলেছে, তার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’, “আসলেই সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অনর্গল মিথ্যা বলার যে একটি ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স’ সেটি আবারও প্রমাণ করলেন সেই কেন্দ্রের একজন সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।”
প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকীর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারাই যাদের ছেলে মেয়েরা বিদেশিদের বিয়ে করে বিদেশেই নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। বিদেশেই বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকে। প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী গর্বের সঙ্গে নিজেকে বৃটিশ বলতেই ভালোবাসেন, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নয়।’, ‘আওয়ামী নেতারা নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশিদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে আত্মস্লাঘা লাভ করেন। যারা বাংলা ভাষা, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে মার্কেটিং করতে সদা তৎপর, অথচ তারাই কোন চেতনায় বিদেশিদের কাছে সন্তানদের বিয়ে দিচ্ছেন, সেই চেতনাটি কী সেটি ক্ষমতাসীনদেরকে পরিষ্কার করা উচিৎ।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যাতনা দিচ্ছেন জনগণকে। যারা দেশের জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, বেগম পল্লী বানিয়ে গোটা পরিবারকে সেখানে প্রতিপালন করে, তারা আবার কিসের বাংলাদেশি?’‘জিয়া পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মাটি, পানি ও জলবায়ুর সন্তান’এমন মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘সরকারের চক্রান্তে মিথ্যা মামলায় পরিণতি কী হবে সেটি নিয়ে কোনো চিন্তা না করে কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশনেত্রীর দেশে ফিরে আসার পর তাকে দেয়া হয় সরকারি ফরমানে প্রতিহিংসার সাজা।’
‘এখন কারাবন্দি থেকে অমানবিক জুলুম সহ্য করে যাচ্ছেন। অথচ দেশনেত্রী বিদেশে গিয়েও তিনি সেখানে থেকে যাওয়ার চিন্তা করেননি।’, ‘দেশনেত্রীর এই ভূমিকাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিকের ভূমিকা। অথচ সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক আওয়ামী নেতারাই বলেছিলেন যে, বেগম জিয়া লন্ডন থেকে আর ফিরবেন না।’, ‘কিন্তু তারা বেগম খালেদা জিয়াকে চিনতে পারেনি। দুর্জয় সাহসে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক মূর্ত প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথানত করেননি। দেশ থেকে প্যারোলে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনারই দৃষ্টান্ত।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখান করায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুরও সমালোচনা করেন রিজভী।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, নির্যাতন, বাক স্বাধীনতা সীমিত করা, ‘এনজিও’ জামায়াতকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার সমালোচনা করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
গত শনিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরদিন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের মুখপাত্র ইনু এটি প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবেদনটিকে একতরফা আখ্যা দিয়েছেন। সরকারের বক্তব্য ছাড়া এই প্রতিবেদন বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর পক্ষে গেছে বলে মনে করেন তিনি।আর তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় রিজভী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে দুঃশাসন চলছে, মানবাধিকারশূন্য বাংলাদেশ। বিরুদ্ধ মত দমনে সর্বগ্রাসী নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা হচ্ছে।’