বর্তমানে মানুষ নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের নির্বাচন কমিশনের কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, ‘মানুষ মনে করছে ভোট দিলেও যা, না দিলেও তা। তাছাড়া তারা নিশ্চিত নয় যে, নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে।’স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করলেও এখন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সুপারিশ করে তিনি বলেন,‘নির্বাচন কমিশনকে নিরাপত্তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত থাকতে হয়।’
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে এনজিও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। ‘আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন: নাগরিক ভাবনা’শীর্ষক এই আলোচনায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আর এনজিওটির কর্ণধার বক্তব্য রাখেন।
আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ মহানগরে ভোট হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫ মে ভোট হবে গাজীপুর ও খুলনায়। আর বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটে ঈদের পর তফসিল হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ মহানগরের এই ভোট প্রধান দুই দলের কাছে তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ রাখার সুযোগ। তাই নির্বাচনে তারা আঁটঘাঁট বেঁধে নামবে-এটাই স্বাভাবিক।এরই মধ্যে গাজীপুর ও খুলনায় ভোটের হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আগামীকাল ২৪ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার।
মূল প্রবন্ধে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জনগণ কোনো রকমের ভয়-ভীতি ছাড়া মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারার নিশ্চয়তাও চায়।’, ‘জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ইসির ওপর বর্তাবে। এ নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অবাধে অনুষ্ঠানের ওপর আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নির্ভর করবে।’
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুরের সিটি নির্বাচন ছাড়া বাকি নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তোফায়েল। বলেন, “আমাদের দেশে নির্বাচনে ‘ক্ষমতা ভীতি’একটি ‘হিস্টিরিয়া’বা ‘ফোবিয়া’হিসেবে সর্বগ্রাসীরূপ নিয়েছে। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এলেই জনমনে প্রথম ভীতি বা আশঙ্কা দেখা দেয়- সরকার বা সরকারি দলের অনুকূলে নির্বাচনী ফলাফলকে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হতে পারে। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রের জন্যই তা জরুরি।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম ধাপ হলো নির্বাচন। তবে সে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। বর্তমানের নির্বাচনগুলো এসব মানদণ্ড পূরণ করতে পারছে না। এজন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে ইসির পাশাপাশি সরকারকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের নির্বাচন কমিশনের কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সুষ্ঠু ভোটের জন্য বেশ কিছু সংস্কারের পরামর্শ দেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, আগের দিনের বদলে ব্যালট বাক্স ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে পাঠানো। এজন্য গ্রীষ্মকালে সকাল আটটার বদলে নয়টা থেকে ভোট শুরুর পরামর্শ দেন তিনি। চলবে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত।প্রতি এক ঘণ্টা পর পর কত ভোট পড়লো তার হিসাব রাখার পক্ষেও সাখাওয়াত। বলেন, ‘এতে করে নির্বাচন নিয়ে জনগণ আশাবাদী হবে।’
সব প্রার্থীর হলফনামা যাচাই-বাছাই করে দেখা দরকার বলেও মনে করেন সাখাওয়াত। বলেন, ‘এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা না থাকলে দুদক বা এনবিআরের সহায়তা নিতে পারে ইসি।’
আয়োজক সংগঠন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়ায় গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন অনেক বার্তা বহন করবে। কারণ এই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে কি না এবং নির্বাচনে কারা জয়লাভ করবে সেদিকে দেশবাসীর নজর থাকবে।’