সব প্রচার শেষ। আগামীকাল খুলনা সিটি নির্বাচনের ভোট। প্রচারের শেষ দিনেও গতকাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর পরস্পরের বিরুদ্ধে ছিল অভিযোগ পাল্টাঅভিযোগ। বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টদের গ্রেপ্তার এবং পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে। দলটির প্রার্থী নজরুল ইসলাম হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ সরকারই শেষ সরকার নয়। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলছেন, কালো টাকা ছড়ানো হচ্ছে, তা প্রতিহত করা হবে। প্রধান দুই প্রার্থীর এমন মরিয়া মনোভাবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে শঙ্কা ছড়াচ্ছে। তবে ভোটাররা সংকল্পবদ্ধ। তারা বলছেন, ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রে যাব। ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব নিজেদের প্রতিনিধি।
প্রচারের শেষ দিনে গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, সে (নজরুল) এত কনফার্ম কীভাবে হয়, আমি মেয়র হবই? নিশ্চয়ই তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। অন্যদিকে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমি নিজেই শঙ্কামুক্ত হতে পারছি না। গত সাত দিনে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশির নামে পুলিশ হয়রানি করছে। সৃষ্টি করা হয়েছে ভয়ার্ত পরিবেশের। প্রায় ২০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে। পোলিং এজেন্ট, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, দপ্তর সম্পাদক, সিনিয়র নেতাসহ অনেকে গণগ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন।পুলিশকে হুশিয়ার করে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে বলব এই সরকার শেষ সরকার নয়। গত ১০ দিনে যে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি আমরা এবং জনগণ; এর জন্য একদিন না একদিন আপনাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।
এ প্রসঙ্গে খুলনার পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, বিভিন্ন মামলার আসামি, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর বাইরে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।নির্বাচনী মাঠ প্রসঙ্গে খুলনা সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ইসির যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি খুলনা সিটি নির্বাচনের দিকে। এখানকার পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে কথা হয় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভোট সুষ্ঠু হবে, আশা করি। আমরাও ভোট দিতে যাব। তবে পাশের বাসার একজনকে আটক করছে। এসব শুনলে তো মানুষের একটু ভয় লাগে।১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রেমকানন এলাকায় কথা হয় দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। খুলনা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের ভয় নেই। ভোট ভালোভাবেই হবে আশা করি। তবে দুই প্রার্থীই ভালো অবস্থানে আছেন। কেউ কাউকে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। সে কারণে ঝামেলা হতে পারে।২১ নম্বরের সুমন কুন্ডু বলেন, দুই প্রার্থীই সমানে সমান। ভোটের ব্যবধান খুব বেশি হবে না। এ জন্য জয়ী হতে দুজনই মরিয়া। ভোটের দিন কী হয় দেখা যাক।
১২ নম্বর ওয়ার্ডে মহসীন কলেজ মোড় এলাকার বাসিন্দা হামিদা আহমেদ বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট। এখানকার একটি বিষয় স্পষ্ট ক্ষমতায় থাকা দল প্রশাসন থেকে একটু ফেবার নিতে চাইবে। বিরোধী দলও চাইবে জিততে। সুতরাং ভোটের মাঠ কতটুকু ফেয়ার থাকে সেটি বলা কঠিন।খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী সমন্বয়ক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি প্রার্থী কালো টাকা ছড়াচ্ছে। সোনাডাঙ্গা থানাপুলিশ যুবদলের এক কর্মীকে ৬১ হাজার টাকাসহ আটক করেও ছেড়ে দিয়েছে। এ সময় পুলিশের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীর কমিটির এ নির্বাহী সদস্য। অবশ্য কালো টাকা ছড়ানোকালে আটক যুবদলকর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সোনাডাঙ্গা ওসি।
এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ওসি বলেন, আটকের বিষয়টি সত্য। তবে যখন আমরা নিশ্চিত হলাম এটি ভোটের দিনের খোরাকি খরচ। তখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার থানায় গতকাল মাদকের মামলার এক আসামিসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।তবে দৌলতপুর থানার ওসি কাজী মোশতার আহমেদ সিপিএম বলেন, আমার থানায় কালকে থেকে কোনো আটক নেই। একদল বলে সন্ত্রাসীতে ভরে গেছে বাট আমরা ধরি না। আর একদল বলে তাদের কর্মী আটক করা হচ্ছে। আমরা আছি উভয় সংকটে। তবে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের বিষয়ে আশাবাদী এই পুলিশ কর্মকর্তা।
দলীয় কর্মী গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এই অভিযোগ প্রসঙ্গে খুলনা সদর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিএনপির কোনো কর্মী হিসেবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় না। যারা মারামারি, মাদক ও সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। গতকাল থেকে আনুমানিক ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভোটগ্রহণের একদিন আগে থেকে নগরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচারের শেষ দিনে খুলনা শহরে নৌকা সমর্থকদের ব্যাপক শোডাউন ও মিছিল দেখা যায়। তবে বিএনপির কোনো শোডাউন দেখা যায়নি। বিএনপির অভিযোগ, নেতাকর্মীদের কোনো প্রচারে দেখলেই আটক, হয়রানি করা হচ্ছে।
মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত ১৭০ বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আজও ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট এহসানকেও আটক করা হয়। ফলে বিএনপির এজেন্ট ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আওয়ামী লীগের দাবি, পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। সহিংসতার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।