বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা নিজেদের ব্যক্তি মতামত নয়, বরং মার্কিন সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। সমপ্রতি অনুষ্ঠিত দু’টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, এটি রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের নিজস্ব মন্তব্য নয়- বরং এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় স্টেট্ ডিপার্টমেন্টের অবস্থানকেই তুলে ধরেছেন’ বলে গতকাল মন্তব্য করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর এ নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় উদ্বেগ বেড়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নতুন সপ্তাহের শুরুতে গত রোববার আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এভাবে কথা বলা সমীচীন হয়নি।’ এর একদিন পর গত মঙ্গলেবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, কেবলমাত্র বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনেই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে থাকে।
এর আগে বিগত ২রা জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজের এক স্ট্যাটাসে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস বিএনপির মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে, অন্যকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো। তাই এই বক্তব্যটি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের বলে ধরে নেয়া যায়। সজীব ওয়াজেদ জয় এই বলে তার মন্তব্য শেষ করেন যে, রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যে বোঝাই যাচ্ছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা আজকাল বিএনপির বন্ধুদের সাথে খুব বেশি সময় কাটাচ্ছেন।
বাংলাদেশের সামপ্রতিক দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য কি ব্যক্তিগত? এ বিষয়ে স্টেট্ ডিপার্টমেন্টের অবস্থান কি? জানতে চাইলে গতকাল স্টেট্ ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ঘড়ষবহ লড়যহংড়হ এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন: রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট কেবলমাত্র এবং একমাত্র একটি একক এন্টিটির পক্ষে কথা বলেন, সেই একক এনটিটি হচ্ছে মার্কিন সরকার। মুখপাত্র বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধান কর্তৃক বাংলাদেশের মানুষকে প্রদত্ত অধিকার অনুযায়ী একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও অহিংস গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে ধারাবাহিকভাবে সমর্থন জানিয়ছেন। ‘মার্কিন সরকার কোনো প্রার্থী বা দলকে সমর্থন করে না’ উল্লেখ করে ওই লিখিত বিবৃতিতে মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করি এবং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সমর্থন জানাই, যার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সমপ্রতি ঘোষিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের কথা উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, রাষ্ট্রপতির জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল মোতাবেক আমেরিকা বিশ্বাস করে যে মুক্ত, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ আমাদের সমৃদ্ধি, মানব সুখ ও শান্তির সর্বোত্তম বাহন। মুখপাত্র বলেন, গণতান্ত্রিক নীতি ও আদর্শগুলোই আমাদের মিত্রদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী জোট এবং অংশীদারিত্বের ভিত্তি গঠন করে, এবং আমাদের মিত্র গণতন্ত্রগুলো যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারে সে প্রচেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে।’