বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রাখতে পারবেন না, ইতিহাস তা বলে না। জনগণই কারাগার ভেঙে তাকে মুক্ত করে আনবে।
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতাদের আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে জগদ্দল পাথর আমাদের ওপর চেপে বসেছে এটা শুধু খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের সমস্যা নয়, এটা পুরো জাতির সমস্যা। তাই পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেই এদের সরাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার এমন জায়গায় গেছে, যেখান থেকে ফিরতে পারবে না। আপনারা যেখানে গেছেন, সেখানে জনগণের কোনও স্থান নেই। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। আপনারা আজকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বন্দুক- পিস্তলের ওপর নির্ভর করে হুকুমের বলে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। একটা দিনের জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেন না। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দেখুন কী অবস্থা হয় দেশের। আজকে আপনারা যে অবস্থায় দেশটাকে নিয়ে গেছেন, এটাতে কোনোভাবেই আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণের জায়গা নাই। আপনারা একে একে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার কোনও পরিবেশ নেই এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রলীগ দখল করে নিয়েছে। আজকে স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছু নেই। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে, আপনারা নিজেরাই দেখছেন পত্রিকায় আসছে। চিকিৎসকরা হাসপাতাল বন্ধ করে দিচ্ছেন। রোগীদের বের করে দিচ্ছেন।’
খালেদা জিয়াকে কয়দিন জেলে রাখবেন— প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বেশি দিন জেলে রাখতে পারবেন না। ইতিহাস তা বলে না। ইতিহাস বলে— এদেশের মানুষ সবসময় নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে। ইতিহাস বলে— এদেশে সব সময় যাকে কারারুদ্ধ করে নির্যাতন করা হয়, তার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। আপনারা নিশ্চিত দেখবেন, খালেদা জিয়াকে এদেশের মানুষ কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবে, কারগার ভেঙেই তাকে নিয়ে আসবে। মানুষকে একত্রিত করতে হবে। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা করতে হবে।’
খালেদা জিয়ার জন্য দেশের মানুষ কোনো চিন্তা করে না, ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য দুঃখজনক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ধরনের কথা কোনো রাজনৈতিক সচেতন মানুষের বলা উচিত না। খালেদা জিয়ার জন্য ঘরে ঘরে মানুষ কাঁদে, রোজা রাখে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন,‘এই কমিশনকে কিছু জিজ্ঞেস করলে (তারা) বলে উল্টো কথা। একজন সচিবকে দিয়ে আপনারা নির্বাচন কমিশন চালান। তিনি হলেন হেলালউদ্দিন সাহেব। আমরা শুনেছি যে, তিনি বিকাল চারটা পর্যন্ত অফিস করেন। এরপর তিনি চলে যান একটি বিশেষ দলের বিশেষ কার্যালয়ে। সেখানে সেই দলের নির্বাচনের পরিকল্পনা তৈরি হয়, যার প্রধান হলেন এইচ টি ইমাম সাহেব। তিনি যেকোনও নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে যান। সেখানে গিয়ে কথা বলেন। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ২০১৪ সালের নির্বাচন তিনি নিজেই করিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। এখানে আপনি কী গণতন্ত্র আশা করেন। নির্বাচনের ফলাফল কী আশা করবেন?’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, হতাশ হবেন না, হতাশাই শেষ কথা নয়। সত্য ও সঠিক পথে আছি। মানুষের জন্য মানুষের পথে আছি। অবশ্যই সফল হব।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ’৯০-এর ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, খোন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান আসাদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রফিক সিকদার ও শাহজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ।