ব্রিটেনের আইনজীবী লর্ড অ্যালেক্স কার্লাইলকে কেন বাংলাদেশের ভিসা দেয়া হলো না – সরকারের কাছে এই প্রশ্নেরর উত্তর জানতে চেয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় লড়তে ঢাকায় আসার কথা ছিল লর্ড কার্লাইলের। সরকার তাকে বাংলাদেশের ভিসা দিল না। অথচ আগরতলা মামলায় লড়তে স্যার টমাস উইলিয়ামকে ঠিকই বাংলাদেশে এসে আইনি লড়াই করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এসব বৈষম্য কেন?
বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা অবহেলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে মঈন খান বলেন, লর্ড কার্লাইল তো খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাহলে তাকে কেন খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনি পরামর্শ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি? দেশের প্রত্যেকটি মানুষের গণতান্ত্রিক, আইনি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে সেটি দেয়া হচ্ছে না।
‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অবহেলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এ আলোচনায় মঈন খান আরও , ‘শওকত মাহমুদ লর্ড কার্লাইলের বিষয়টি বলেছেন। বিষয়টি আমরা সামনে আনতে বাধ্য হচ্ছি এই কারণে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে- তার সাথে এটা সম্পৃক্ত। শওকত মাহমুদ আরো বলেছেন, সম্প্রতি লর্ড কার্লাইলকে ভারতে আসতে দেয়া হয়নি। তাকে ভিসা দেওয়া হয়নি। এখানে তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘শওকত মাহমুদের সঙ্গে আমি একটু যোগ করতে চাই। লর্ড কার্লাইলকে ভারতে আসতে দিলো কি দিলো না, সেটা নিয়ে আমি কোনও বক্তব্য রাখবো না। এটা ভারত সরকারের বিষয়। আমরা জানি, ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারত না হয় তাকে ভিসা দেয়নি, তবে আমার ছোট একটি প্রশ্ন- কার্লাইল বাংলাদেশে কেন আসতে পারলেন না? তিনি বাংলাদেশের ভিসা কেন পেলেন না? তাকে তো আমরা বেগম জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেছি।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) কি আপনাদের ইতিহাস ভুলে গেছেন? টমাস উইলিয়ামকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছিল। সেইদিন কি তিনি বাংলাদেশে এসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে ওকালতি করেন নাই? নিজের ইতিহাস যখন নিজে ভুলে যায়, তার ভবিষ্যৎ কিন্তু ভালো না!’
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে বাধ্য করা হবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে সরকারকে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বাধ্য করা হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা হবে। ইনশাআল্লাহ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হবেন।’
মঈন খান বলেন, ‘আমরা কোথাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারি না। জাতীয় প্রেসক্লাব বা দলীয় কার্যালয়ের সামনে যেখানেই যে কর্মসূচি দেয়া হোক না কেন সেখানে সরকার বাধা দিচ্ছে। হোক সেটি কালো পতাকা প্রদর্শন বা অনশন কর্মসূচি। শুধু বিএনপির কর্মসূচি বা বিএনপির ওপর নয়, যারাই আন্দোলন করছে তাদের ওপরই সরকার নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে। কিছুদিন আগেও কোটা আন্দোলনকারীদের কিভাবে হামলা করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে তা দেশবাসী দেখেছে। বিএনপি বা বিরোধী রাজনৈতিক দল নয় সরকারের ভিন্নমতের যারাই কথা বলুক তাদেরই দমন করা হচ্ছে।’
মানবাধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ যেখানে মানুষের জীবনেরই নিরাপত্তা নেই সেখানে মানবাধিকার দিয়ে কী হবে? আগে মানুষকে তো বাঁচতে হবে, তারপর তো মানবাধিকারের প্রশ্ন আসবে। দেশে কারও জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। যে ব্যক্তিই সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে তাকেই কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে।’
‘বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না’- ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে একমত। বিএনপি আওয়ামী লীগ নেতাদের মত লগি বৈঠার আন্দোলন করতে পারে না। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করি। তাই আমাদের আন্দোলন তাদের কাছে পছন্দ হবে না। আমরা আপনাদের একটা চ্যালেঞ্জ করি- আসুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যারাকে রেখে রাস্তায় নামুন, আমরাও আসি। দেখি কার আন্দোলন কত বেশি হয়। কারা আন্দোলনে টেকে সেটা রাজপথে নামলেই প্রমাণ হয়ে যাবে। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে দেখিয়ে দেবো কীভাবে সরকার পতন করতে হয়। সামনে পিছে ডানে বামে পুলিশ, র্যাব রেখে বড় বড় অনেক লথা বলা যায়। রাজপথে সাপের মত লাঠি দিয়ে মানুষ পিটিয়ে মারাকে কখনও আন্দোলন বলা হয় না। আমরা তেমন আন্দোলনে বিশ্বাস করি না।’
বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের অত্যাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৯ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ১৮ লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরও খালেদা জিয়া আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের সেরা আইনজীবীদের একজন লর্ড কার্লাইল। গত মার্চ মাসে তাকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারপর থেকে লর্ড কার্লাইল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু বাংলাদেশের আদালতে খালেদা জিয়ার হয়ে মামলা লড়ার জন্য আসতে চাইলেও তার জন্য ভিসা পাননি।