“ছাত্রলীগের রাজনীতিই আজকের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে তৈরি করেছে”
জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলায় জন্ম নেয়া আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯) টানা তৃতীয় বারের মত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একইসাথে তিনি জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত আছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক এবং সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।
সাংগঠনিক দায়িত্ব , সমসাময়িক রাজনীতি , জয়পুরহাট নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা সহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন পলিটিক্সনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের সাথে।
পলিটিক্সনিউজ: “আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন” পাঁচ শব্দের একটি বড় নাম। কে রেখেছিলেন এবং নাম বড় হওয়ার কারণে কখনো বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আমার বাবা মার আমি জীবিত বড় সন্তান। আমার আগে আমার দুই বোন জন্ম নেয়। একজন জন্মের একদিন পরে এবং আরেকজন জন্মের ১৫ দিন পরে মারা যায়। এ কারণে আমি জন্ম নেয়ার পরে বাবা মার মধ্যে একটা ভয় ছিল। হয়তো এ কারণে আবেগ থেকে তাদের স্বপ্নের সন্তান হিসেবে স্বপন রেখেছে। আমার বাবা তখন ঢাকায় চাকরি করতেন। তিনি ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেবের কাছে গিয়ে বৃত্তান্ত বলেছিলেন। তখন পীর সাহেব আমার পুরো নামটি দিয়েছিলেন। মজার ঘটনা হচ্ছে আমার নাম এবং আমার ছোট ভাইয়ের নাম প্রায় একই। আমার নামের মাহমুদ আর তার নামে মাহবুব এই পার্থক্য।
লম্বা নামের কারণে অনেক জায়গাতেই আমার নাম শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে না । কোথাও কোন ইমিগ্রেশনে গেলে আমার এতবড় নামটাকে তারা ভালোভাবে নেয় না। একবার দুবাইতে বড় ঝামেলায় পড়েছিলাম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে একবার সমস্যা হয়েছিল। আমার স্ত্রী এবং কন্যা ভিসা পাওয়ার প্রায় ৪৬ দিন পর আমি ভিসা পেয়েছিলাম। এরকম বিড়ম্বনা আমি সবসময় বহন করি।
পলিটিক্সনিউজ: মাত্র ৪০ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় তৃতীয়বারের মতো সে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আমার বাবা একটি কথা বলতেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি একটি ভোটও পায় তবে সেটা আমি দেব। আমার বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। আমার কয়েকজন মামা কিছুটা আওয়ামী বিরোধী ছিলেন। তারা আমাদের বাসায় আসলে প্রায় আমার বাবার সাথে রাজনৈতিক বিষয়ে অনেক তর্ক হতো এবং এত জোরে হত যে আমরা অনেক সময় পড়াশুনা বন্ধ করে তাদের তর্ক শুনতাম। আমার বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হই এবং তখন থেকে আমি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক। ১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে একটি জনসমাবেশে এসেছিলেন। আমি তখন ছোট্ট বালক হলেও একেবারে সামনের সারিতেই ছিলাম। যখন তিনি শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করছিলেন, তার চোখে অশ্রু দেখেছিলাম, তিনি অঝরে কেঁদেছিলেন । তখন থেকেই আসলে নেত্রীকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছিলাম।
কলেজে পড়াকালীন অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়াই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে প্রথম দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মিছিল না দেখে মন খারাপ হয়। দ্বিতীয় দিন ছাত্রলীগের একটি মিছিল দেখে আমি অংশগ্রহণ করি। যেহেতু কলেজ জীবনে স্লোগান দেয়ার অভ্যাস ছিল এবং মিছিলের শ্লোগান পছন্দ হচ্ছিল না তাই কিছুক্ষণ পরই শ্লোগান ধরি। মিছিল শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ভাইরা আমাকে খুব আপন করে নেয়। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক হই। অতঃপর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক এবং সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ছাত্রলীগের রাজনীতিই আজকের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগই আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম। ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষ করার পরে আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। পরবর্তীতে কাউন্সিলে নেত্রী আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। এটা আমার কাছে ছিলো আমার প্রত্যাশার চেয়ে হাজার গুণ বেশি প্রাপ্তি। নেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা আমার সর্বোচ্চ দিয়ে পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
পলিটিক্সনিউজ: সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বিগত দুই মেয়াদে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ ছিল রাজশাহী এবং এবার আপনি খুলনা বিভাগের দায়িত্বে। সাংগঠনিক সম্পাদকের হিসেবে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলোতে কি কি দায়িত্ব পালন করেছেন?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: প্রথম দুই মেয়াদে আমি রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম। এই মেয়াদে আমি খুলনা বিভাগের দায়িত্বে এসেছি। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রথম মেয়াদে আমার সফলতা খুব বেশি নেই। তখন কেবল দল ক্ষমতায় এসেছিল। সবাই একটা গুড মুডে ছিল। ২০১২ সাল থেকে রাজশাহী বিভাগে আমরা তৃণমূল সম্মেলন শুরু করি। আমি ফাঁকিবাজি কাজ করতে রাজি না, যখন যেটুকু কাজ করি মন দিয়ে কাজ করি। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন লেভেলে কাজ শুরু করি। তারপর থানা সম্মেলনগুলো শুরু করি। এটা করতে আমার ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর হয়ে গেল। হঠাৎ করে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে এসে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায়কে নিয়ে একটি বড় ধরনের ঝামেলা হয়। বিশেষ করে জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহীর একটি অংশ, সিরাজগঞ্জের একটি অংশে আমরা ধাক্কা খাই।
বিরূপ পরিস্থিতিতে সম্মেলন আপাতত স্থগিত করে যেসব এলাকায় ঝামেলা বেশি হয়েছিল সেসব এলাকায় আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। যেখানে যেখানে ঝামেলা বেশি হয়েছিল সেখানে আমরা আমাদের কাজের উপর জোর দেই। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় নেতা জনাব মোহাম্মদ নাসিম, খায়রুজ্জামান লিটন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজনু সাহেব, আখতার জাহান আপা সহ সবাইকে নিয়ে আমরা সবাই মিলে সংগঠনটাকে মেরামত করি।
২০১৪ সালে ৫ ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরে আমরা সব ওয়ার্ড সম্মেলন, থানা সম্মেলন শেষ করে ২০১৫ সালের ৮ ই জানুয়ারির মধ্যে সকল জেলার সম্মেলন শেষ করি। সফলতা এ জায়গায়, সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মীদের প্রত্যাশাকে আমরা বাস্তবায়ন করেছিলাম, তৃণমূলের সবাই তাদের মতামতের ভিত্তিতে নেতা বানাতে পেরেছিল এবং কোথাও কোন সম্মেলনে কোন ঝামেলা হয়নি। যার ফলে পরবর্তীতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার সেখানে খুব ভালো ফলাফল পেয়েছি। সাংগঠনিকভাবে রাজশাহী বিভাগে সংগঠনকে একটি মজবুত ভিত্তিতে দাঁড় করানো ছিল আমার সফলতা।
খুলনা বিভাগে দায়িত্ব পেয়েছি এই মেয়াদে। রাজশাহী বিভাগে শেষ করার পরে সারাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই সম্মেলন শুরু হয়েছিল। খুলনা বিভাগে সবগুলো জেলা সম্মেলন হয়েছিল, তবে অনেক ওয়ার্ড, থানায় অনেকদিন ধরেই সম্মেলন হয়নি। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের আগে সম্মেলন করতে গেলে কিছুটা বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে। এমন পেক্ষাপটে আমরা সংগঠনকে ওয়ার্কেবল করার চেষ্টা করছি যেন সবাই মুক্তমত নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারে। আমারা সামনে নির্বাচনটি পার করতে চাই। নির্বাচনের পর পর আমি চেষ্টা করব ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, জেলা গুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে।
পলিটিক্সনিউজ: স্থানীয় রাজনীতি এবং জাতীয় রাজনীতির মধ্যে আপনি মৌলিক কি পার্থক্য দেখেন?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: জাতীয় রাজনীতি একটি নির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক আদর্শভিত্তিক রাজনীতি। সেটা সবাই ফলো করে। স্থানীয় রাজনীতিতে অনেক ধরনের উপাদান কাজ করে। এলাকার জনস্বার্থ এবং এলাকার গোষ্ঠীগত স্বার্থ এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তৃণমূলের রাজনীতি করতে হলে এলাকার মানুষকে অনেক বেশি সময় দিতে হয় যেখানে জাতীয় রাজনীতি অনেকটা দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রিক। জাতীয় রাজনীতি এবং স্থানীয় রাজনীতি একটি আরেকটির পরিপূরক। তবে জাতীয় রাজনীতি অনেক বেশি সুবিধাজনক।
পলিটিক্সনিউজ: রাজনৈতিক দলে অনেক বেশি গ্রুপিং পাল্টা গ্রুপিং দেখা যায়। এ বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: সংগঠনে গ্রুপিং থাকবেই। পৃথিবীর যে প্রান্তে তিনজন বাঙালি রয়েছে সেখানে দুটি গ্রুপ থাকবে।এই সমাজে অনেক রকম মানুষ আছে, সমাজের মানুষকে নিয়ে আওয়ামী লীগ। দলে গ্রুপিং না থাকার দুটি কারণ হতে পারে, হয় দল বন্ধ্যা নয়তো স্বৈরতন্ত্র আছে। একটি ইউনিয়নে স্বৈরতন্ত্র থাকতে পারে, একটি নির্বাচনী এলাকায় স্বৈরতন্ত্র থাকতে পারে। আমাকে যে পছন্দ করে না সে আওয়ামী লীগ করে না এরকম মানসিকতা আমাদের অনেকেরই আছে। সবাইকে আমি সন্তুষ্ট করতে পারব না তবে একই মতের ও আদর্শের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে নিয়ে চলতে হবে। দলে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপিং থাকবেই। তবে স্বচ্ছভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন হলে দল গতিশীল হয়।
পলিটিক্সনিউজ: কিছুদিন আগেই ছাত্র আন্দোলন হয়ে গেল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি গুজবের শিকার হয়েছে এবং দেশের অনেকেই এই গুজবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। ভবিষ্যতেও নানা গুজব ছড়াতে পারে। এসব গুজব প্রতিরোধ করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত কিনা?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ গুজবের শিকার হয়েছে। জন্মকালে পাকিস্তানিরা বলেছিল, ভারতীয়দের সাথে যোগসাজশ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়েছে। সেই থেকে অদ্যাবধি পাকিস্তানী মতাদর্শে বিশ্বাসীরা আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল মনে করে! পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অপরাধে আওয়ামী লীগকে ইসলামের দুশমন বলা হয়! হিন্দুর দল বলা হয়! আওয়ামী লীগ ইসলামে বিশ্বাস করে না, বিসমিল্লাহ্’য় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে আযান বন্ধ হবে, মুসলমান নারীদের শাঁখা-সিঁদুর পড়তে হবে, পুরুষদের লুঙ্গি ছেড়ে ধূতি পড়তে হবে। নৌকায় ভোট দিলে বেহেস্ত হারাম হয়ে যাবে, বিবি তালাক হয়ে যাবে। ধানের শীষ, দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে।
যেন রাব্বুল আ’লামীন কেয়ামতের মাঠে বিচারের পূর্বে বেহেস্তের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সোল এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন বেগম জিয়া ও গোলাম আজমকে ! নাউজুবিল্লাহ্ ।
পরম ধৈর্য, সহনশীলতা ও সম্মান প্রদর্শন করে হেফাজতের আন্দোলন মোকাবেলা করার পর হাজার হাজার মানুষ হত্যার উদ্ভট অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগকে নাস্তিক বলা শুরু হয়। একই সঙ্গে নাস্তিক বামাতিরা আওয়ামী লীগকে হেফাজতের দোসর বলা শুরু করে।
এর আগে শুনেছি বাংলাদেশ রাষ্ট্র- স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু ভারতের নিকট এক দলিল মূলে বাংলাদেশের মালিকানা লিখে দিচ্ছিলেন বলে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা পুত্র খুনি ডালিমের স্ত্রীকে তুলে এনেছিলেন, ব্যাংক ডাকাতি করেছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি নোংরা গুজব।
গুজবকারী দলের প্রধান খালেদা জিয়া ৯১ সালে নিজে ফেনীতে জনসভায় দাঁড়িয়ে গুজব করেছেন, নৌকা জিতলে ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। রাজবাড়ীতে জনসভায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ জিতলে পদ্মার পশ্চিম দিকের পুরা বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে।
গুজবের এ’পর্যন্ত সর্বশেষ সংযোজন ধানমন্ডিতে তাদের দ্বারা মিথ্যা গল্প আওয়ামী লীগ অফিসে ছাত্রদের ধরে এনে খুন করা হচ্ছে, চোখ তোলা হচ্ছে এবং ছাত্রী ধর্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত যে কত কত গুজব আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রটানো হয় তার কোন হিসাব করা সম্ভব নয়।
আমি আওয়ামী লীগ করি একথা দিবালোকের মত সত্য। কিন্তু কেউ যদি আমাকে বলেন, বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বা বাসদ অফিসে কোন নারীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে আমি তা বিশ্বাস করব না। যদি কেউ বলে জাতীয় পার্টি বা কোন বাম দলের অফিসে প্রণয় হচ্ছে তাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।
ছাত্র শিবির রগ কাটে, ছাত্র হত্যা করে, ছাত্রদল অভ্যন্তরীণ ও অপর ছাত্রসংগঠণের নেতাকর্মীদের হত্যা করতে সিদ্ধহস্ত। তবুও ছাত্রশিবির বা ছাত্রদলের কর্মীরা তাদের অফিসে কাউকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করছে এমন তথ্যও আমি বিশ্বাস করব না। তারা অসংখ্য রগ কাটা ও হত্যার দায় বহন করে চলেছে কিন্তু নিজ অফিসে কাউকে ধরে এনে হত্যা, ধর্ষণ করেছে এমন তথ্য আমি অদ্যাবধি শুনিনি।
আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের নিকট আমাদের অফিস একটি আবেগের স্থান। নিজ নিজ ধর্মের উপশনালয়ের পরই নিজ নিজ দলীয় অফিসকে আমরা মর্যাদা দিই। সেই অফিসে ভিন্ন মতাবলম্বীকে ধরে এনে খুন, ধর্ষণ, চোখ উপড়ানোর উর্বর তথ্য বিশ্বাসকারীদের প্রতি করুণা করা ছাড়া কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না।
উন্নয়ন ও কল্যাণময়ী শেখ হাসিনা এবং বাংলার মাটি ও মানুষের দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি- জামাত, ক্ষয়িষ্ণু বামাতিদের পজিটিভ কোন রাজনৈতিক বক্তব্য ও কর্মসূচী দেবার মত ইস্যু নেই। তাই তারা মিথ্যা অপপ্রচার করে গুজব ছড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল, তৃণমূলের মানুষের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা এসব মিথ্যা অপপ্রচার প্রতিরোধের জন্য জনগণের সাথে কথা বলছি এবং জনগণ কেউ কেউ সাময়িক বিভ্রান্ত হলেও চক্রান্তকারীদের এসব অপবাদ বুঝেছে এবং জনগণকে সাথে নিয়েই এসব অপপ্রচার প্রতিরোধ করব।
পলিটিক্সনিউজ: আপনার নির্বাচনী এলাকা জয়পুরহাট-২ সংসদীয় আসনে কি কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আমার নির্বাচনী এলাকা একটি অবহেলিত এলাকা। ভৌগলিক কারণে আমার নির্বাচনী এলাকা মহাসড়কের পাশে না হওয়ার কারণে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে কিছুটা বঞ্চিত হয়েছে। এই এলাকার মানুষ বিনা কারণে সব সময় ধানের শীষে ভোট দিত। যেহেতু মানুষ ভোট দিত এবং ধানের শীষ থেকে দাঁড়ালেই পাস করা যায় তাই তখন তাদের মধ্যে সেই অনুভূতি জাগেনি যে আমাকে কাজ করতে হবে। আমি গত ১০ বছর ধরে এই এলাকায় অনেক কষ্ট করেছি, প্রচুর সময় দিয়েছি। আমার সাফল্য হচ্ছে আমার নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলাতেই ৬ মাস আগে আমি বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিটি মানুষ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। এলাকায় রাস্তাঘাট খুব কম ছিল। রাস্তাঘাট করেছি এবং অনেকগুলো পাকা করেছি। এখানে তিনটি কলেজ জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারীকরণ করেছেন, তিনটি স্কুল সরকারীকরণ করেছেন, অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ভবন হয়েছে এবং আরও কিছু চলমান রয়েছে। আমাদের মহাসড়কে যে রাস্তা গুলো রয়েছে সেগুলো প্রশস্ত হয়েছে এবং কাজ চলমান রয়েছে। গত ৫০ বছরে জয়পুরহাট ২ নির্বাচনী এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে এবং আমার এই সাড়ে চার বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে পাল্লায় মাপলে এটি ভারী হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জয়পুরহাটে। সেখানে সন্ত্রাস, মাস্তানি, চুরি চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন নেই। নারীঘটিত অপরাধের মাত্রা অত্যন্ত কম। আমার নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা নেই বললেই চলে। বিরোধী দলের কেউ রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়নি, অহেতুক মামলার শিকার হয়নি। সবাই মিলে সুন্দর নির্বাচনী এলাকা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। সেখানে যারা বিরোধী দল আছে তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছে। জয়পুরহাটে সোশ্যাল হারমনি আমরা ডেভেলপ করতে পেরেছি। এটি হচ্ছে আমাদের সফলতা।
আল্লাহ যদি তৌফিক দান করে আরেকবার যদি নির্বাচিত হই, দল ক্ষমতায় আসে তাহলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে কাজটি করব তা হল বেকারত্ব মুক্ত এবং দারিদ্রমুক্ত জয়পুরহাট গড়ে তোলা এবং জয়পুরহাটকে বাংলাদেশের একটি উন্নয়নের মডেল করে গড়ে তুলব। এটি আমার চিন্তা এবং প্রত্যাশা।