একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ‘হ্যাটট্রিক মিশন’ সামনে রেখে তৃণমূলে নির্বাচনী বার্তা দিতে সফর শুরু করছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে শনিবার আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে উত্তরবঙ্গ সফরে গেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
একই লক্ষ্যে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বরগুনা ও পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর বরগুনা ও পটুয়াখালীতে কর্মীসভা করবে ক্ষমতাসীন দলটি। এরপর ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগে নির্বাচনী বার্তা নিয়ে সফর করবে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সারাবাংলাকে বলেন, “আমারা দক্ষিণবঙ্গে বঙ্গোপসাগারের উপকূলবর্তী পটুয়াখালী এবং বরগুনায় যাব। ১৩ সেপ্টম্বর লঞ্চে রওনা দিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে বরগুনা এবং বিকেলে পটুয়াখালীতে কর্মীসভা করব। আমার মনে হয়, কর্মীসভাগুলো জনসভাতে রূপান্তরিত হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ‘নির্বাচনী বার্তা’ দিতে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করাই এখন আমাদের মূল কাজ।”
চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম সারাবাংলাকে আগামী ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর সড়ক পথে চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাচনী সফরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সফরসূচি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির সারাবাংলাকে বলেন, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীতে কর্মীসভা করা হবে— কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে টেলিফোনে এমন নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
এরই মধ্যে সিলেট থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলা সফর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি পালন শেষে নির্বাচনকে সামনে রেখে গোটা সেপ্টেম্বরজুড়ে একাদশের হ্যাটট্রিক মিশন সফল করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ‘সাংগঠনিক বার্তা’ দিতে বিভাগওয়ারি ‘ফলোআপ কর্মসূচি’ শুরু করেছে। অক্টোবরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পুনরায় জেলা সফরে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও নৌকার বার্তা নিয়ে বিভিন্ন জেলায় জেলায় সফর করার কথা রয়েছে। কারণ সেপ্টেম্বরজুড়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক বার্তার পাশাপাশি অক্টোবর থেকে নির্বাচন অবধি রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার কর্মসূচি ও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
এর আগে, শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নীলসাগর ট্রেনে নীলফামারীর উদ্দেশে নির্বাচনী ট্রেনযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই নির্বাচনী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। যাত্রাপথে প্রতিনিধি দলের নেতারা টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার অন্তর্ভুক্ত রেলস্টেশনগুলোতে পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগের এই রেলযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বি এম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং আনোয়ার হোসেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে বলেই জানা গেছে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। সেই উপলক্ষেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভা নির্বাচনী বার্তা দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তারপরও আগস্টে শোকের কর্মসূচি শেষে তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে আরও একটু উজ্জীবিত ও সংগঠিত করতে এমন সফর শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে, ঢাকা থেকে নীলফামারীগামী আন্তঃনগর ট্রেনে চড়ে গতকাল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার কারণে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। স্টেশনে স্টেশনে আওয়ামী লীগের পথসভার কারণে ট্রেনের অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ, নির্ধারিত সময়েরও অনেক পরে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়াসহ গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হওয়ার ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে নীলফামারীর উদ্দেশে রওনা করে নীলসাগর এক্সপ্রেস। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের জন্য নির্ধারিত রিজার্ভ করা বগিতে ওঠেন। ট্রেনের বাকি বগিতে ওঠেন আওয়ামী লীগের উত্তরাঞ্চলের নেতাকর্মীসহ সফরসঙ্গী গণমাধ্যমকর্মীরা। ট্রেনযাত্রায় প্রথম পথসভা হয় টাঙ্গাইলে। স্বাভাবিকভাবে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে স্টেশনে পৌঁছায় কিন্তু শনিবার ট্রেনটি ১০টা ৩৩ মিনিটে স্টেশনে পৌঁছায় এবং ২ মিনিটের পরিবর্তে ৩৩ মিনিট পর অর্থাৎ ১১টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। এতে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তি ও অস্বস্তিতে পড়েন। এমন করে প্রতিটি স্টেশনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনটি। রেলের অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সাধারণত প্রতি স্টেশনে তিন থেকে পাঁচ মিনিট বিরতি দেয়। সচরাচর নীলসাগর ট্রেনটি সাধারণত ৫টা ৪৫ মিনিটে নীলফামারী পৌঁছায়। কিন্তু শনিবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পথসভার কারণে ট্রেনটি সময়মতো পৌঁছতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের প্রতিটি পথসভা নির্বাচনী জনসভায় রূপ নেয়। বর্তমান সংসদ সদস্যসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা স্টেশনে স্টেশনে জমায়েত হয়ে শোডাউন দেয়। ট্রেনযাত্রা একটা পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের ট্রেনের আরোহীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং যাত্রা বিলম্বের কারণে যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন বলেও জানা যায়। ট্রেনযাত্রা শেষ করে আকাশপথে ঢাকায় ফেরার আগে রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
গতকাল ট্রেন যাত্রার বিভিন্ন পথসভায় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ জনগণের উদ্দেশে নির্বাচনী বার্তা দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পথসভাগুলোতে ওবায়দুল কাদের বলেন, চারদিকে নৌকার গণজোয়ার দেখছি। পথসভাগুলো রীতিমতো জনসভায় রূপ নিয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হয়। সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যায়। বিশ্বের বুকে মর্যাদা বাড়ে। জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের অর্থ লুটপাট করে নিজেদের ভোগ বিলাস। বিদেশে পাচার। রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদ ঘটানো। কাজেই আগামী সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। সে কারণে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। অপরদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিশৃঙ্খলা করবেন না। বিশৃঙখলাকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। তিন দিনের মধ্যেই শোকজ যাবে। তার আগে নির্বাচনী ট্রেন যাত্রার শুরুতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের উন্নয়ন কাজ তৃণমূলে পৌঁছে দিতে এবং দলকে শক্তিশালী করতেই উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের ট্রেন সফর। তৃণমূলের মানুষ যাতে বিএনপি-জামায়াতের গুজবের রাজনীতির বিষয়ে সচেতন হতে পারে সে বিষয়ে দলের এই সাংগঠনিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্রঃ সারা বাংলা