চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার। বিএনপির শাসনামলের দুই দফায় তিনি প্রায় ১১ বছর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তার বয়স ৬০ বছরের কাছাকাছি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর আব্দুস সাত্তার আদালতে গিয়ে জানতে পারেন, তার বিরুদ্ধে নগরীর খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযোগ- তিনি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করেছেন।
বিস্মিত আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৪টায় উঠে আমার মতো একজন ৬০ বছরের কাছাকাছি বয়সের মানুষ পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ? যদি বলত-আমি ককটেল হামলার নির্দেশ দিয়েছি সেটাও তো বিশ্বাসযোগ্য হত কারও কারও কাছে। আমি বাসায় ঘুমিয়েছি। সকালে উঠে কোর্টে গিয়ে জানতে পারি, আমি মামলার আসামি।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে নগরীর সাত থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অন্তত সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলাকে ‘গায়েবি মামলা’ বলছে বিএনপি। এসব মামলায় শ’খানেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি বিএনপির।
বিএনপির ‘গায়েবি মামলার’ অভিযোগ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে রাজি নন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো.মাহবুবর রহমান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। সুনির্দিষ্ট ঘটনায় মামলা হচ্ছে।’
যেসব থানায় মামলা হয়েছে সেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও এ সব মামলার বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করলে, গাড়ি ভাঙচুর করলে সেটা তো মিডিয়ায় আসত। এখন যেসব মামলা আমাদের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা হচ্ছে, একটি ঘটনাও মিডিয়ায় আসেনি। প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলে মামলা হোক কিন্তু গায়েবি মামলা কীভাবে মেনে নেওয়া যায় ? তবে আমরা এসব মামলাকে ভয় করি না। আমাদের ভয় কেটে গেছে। সাময়িক কৌশল হিসেবে আমরা আপাতত বাসাবাড়িতে থাকছি না। বিভিন্ন জায়গায় সরে আছি।’
দলীয় সূত্র মতে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নম্বর ১৯। মামলার প্রধান আসামি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম। গ্রেফতার করা হয়েছে ওয়ার্ড যুবদল নেতা মনছুর আলম ও রাশেদকে।
১৭ সেপ্টেম্বর নগরীর পাহাড়লী থানায় নগর বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক আজাদ বাঙালীসহ ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। এতে গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে।
নগরীর খুলশী থানায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের হয়। এতে আসামি করা হয়েছে সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারসহ ৪৫ জনকে। মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচজনকে। এরা হলেন- রমজান আলী, আবু তাহের, নজরুল ইসলাম সরকার, ইউসুফ হোসেন জিহাদ ও দেলোয়ার হোসেন কালাম। আসামিদের মধ্যে আরও আছেন, নগর বিএনপির সহ সভাপতি এস কে খোদা তোতন, শফিকুর রহমান স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম ও জাহাঙ্গীর আলম দুলাল ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম স্বপন এবং অ্যাডভোকেট জাফর হায়দার।
আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, রমজান আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাত ১২টার দিকে। গ্রেফতারের তথ্য ফেসবুকে এসে গেছে। অথচ তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ওইদিন ভোর সাড়ে চারটায় পুলিশের ওপর ককটেল হামলার মামলায়।
সূত্র মতে, নগরীর হালিশহর থানায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় নগর বিএনপির সদস্য আজিজুর রহমান বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে নগর বিএনপির সহ যুব বিষয়ক সম্পাদক আজাদ বাঙালীর বাসায়ও।
নগরীর বন্দর থানায় গত ১১ সেপ্টেম্বর সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। যুবদল নেতা এরশাদকে ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
নগরীর পতেঙ্গা থানায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ৭৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
নগরীর আকবর শাহ থানায় গত ৭ সেপ্টেম্বর ৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলায় থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস ছাত্তার সেলিমসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নগরীর ডবলমুরিং থানার একটি পুরনো মামলায় সম্প্রতি নগর বিএনপির চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন- নুরুল আলম, জাহাঙ্গীর আলম, মাহবুব আলম ও মো. ইদ্রিছ।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় দায়ের হওয়া একটি পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে নগর বিএনপির প্রশিক্ষণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী, সহ-শ্রম সম্পাদক আবু মুছা, ও জোনাব আলীকে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিটি মামলার বাদী পুলিশ। এজাহারে বলা হচ্ছে- ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে দাঁড় করানোর হীন উদ্দেশে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকিয়া বর্তমান সরকারকে উৎখাত, আসন্ন নির্বাচন বানচাল ও অবৈধভাবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বাহির, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরোধিতার নিমিত্তে সমবেত হইয়াছে।’
‘এই খবর পেয়ে পুলিশ যাচ্ছে এবং তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। সেই মামলায় নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। বাস্তবে এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটছে না।’- যোগ করেন ইদ্রিস আলী।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা নিয়েও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি গায়েবি মামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ নগর বিএনপির নেতাদের।
সূত্র মতে, নগরীর পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা, খুলশী, ইপিজেড ও বন্দর থানায় গত ৫-৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচটি মামলা হয়। এতে বিএনপির ১২৪ নেতা-কর্মীকে আসামি করে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে।
বিএনপির নেতারা তখন অভিযোগ করেছিলেন- খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করার (৮ ফেব্রুয়ারি) আগে হয়রানি করতেই গায়েবি ঘটনা সাজিয়েছে পুলিশ।
সূত্র ঃ সারা বাংলা