ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক এই কালো আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সংবিধান পরিপন্থী। এই আইন বাকশালেরই প্রেতাত্মা দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মুখ বন্ধ করতে, গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে গতকাল ভোটারবিহীন সংসদে পাশ হলো বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকারের লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই এই কালো আইন করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে অথবা যেকোনো মাধ্যমেই যাতে দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশিত না হয়, অথবা প্রকাশ করতে না পারেন সেজন্যই এই ন্যাক্কারজনক কালো আইন তৈরি করা হলো। এই আইনে মানুষের সকল বাকব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। দুর্নীতি ও মানবধিকার লঙ্ঘনের মত অপরাধের বিস্তার লাভ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এটি সংবিধানবিরোধী একটি আইন।’
তিনি বলেন, ‘এ আইনে সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে দেশের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ল। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন বিনা ওয়ারেন্টে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অফিসে ঢুকে তল্লাশীর নামে তান্ডব চালাতে পারবে, কম্পিউটারসহ সকল কিছু সীজ করতে পারবে, যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। সাধারণ মানুষও এই কালো আইনের থাবা থেকে রেহাই পাবে না।’
এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মী, মুক্তচিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান রিজভী।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের মামলায় আগামী ১০ অক্টোবর রায় দেয়া হবে। দীর্ঘ ১৪ বছর ঝুলন্ত রাখার পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা সুপরিকল্পিত নীলনকশারই অংশ।’
রিজভী বলেন, ‘রায় প্রকাশের আগেই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন-এই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি বিপাকে পড়বে। তার মানে সরকার জানে কি রায় হতে যাচ্ছে অথবা সরকারই ২১ আগস্ট মামলার রায় লিখে দিচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ঐ সময়ে যাদের কম বয়স ছিল এখন তারা প্রাপ্ত বয়স্ক, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই- আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দফতর সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিলন স্বাক্ষরিত একটি আবেদনে ২১ আগস্ট ২০০৪ মুক্তাঙ্গণে সভা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। পুলিশের নিকট প্রেরিত আবেদনের ভিত্তিতে ২১ আগস্ট ২০০৪ মুক্তাঙ্গণে সভার জন্য ১৯ আগস্ট ২০০৪ পুলিশ লিখিত অনুমতি দেয়। ২১ আগস্ট জনসভার জন্য মুক্তাঙ্গণের আশেপাশে যথারীতি ব্যাপক পুলিশ নিয়োগ করা হয়। বেলা ১টায় সভাস্থল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে স্থানান্তরিত করা হয়। এতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা হতবাক হয়। আকষ্মিক সভাস্থল পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ২০০ফিট ও ৫০ ফিট এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুলিশ ডেপ্লয়মেন্ট হওয়ার আগেই।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও সরকার তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না। বরং তাকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মারার চক্রান্ত করছে। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তৈয়মুর আলম খন্দকার, আবুল খায়ের ভূইয়া, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।