রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১৪ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ বুধবার (১০ অক্টোবর) সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক আদালত এজলাসে বসেন বেলা পোনে ১২টার দিকে। ১২টার দিকে তিনি রায় পড়া শুরু করেন। তার আগেই সাড়ে ১১টার দিকে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আলোচিত এ মামলায় মোট ৩১ জন আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকালে ঢাকায় আনা হয়েছে।
রায় পড়ার শুরু করার আগে তাদেরকে নাজিমুদ্দিন রোডের অস্থায়ী বিশেষ আদালতে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুও রয়েছেন। পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাদেরকে আদালতে আনা হয়।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকাসহ রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। রায় ঘিরে আজ সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হলেও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। তবে প্রাণ হারায় দলের ২৪ জন নেতাকর্মী।
নজীরবিহীন এ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা পৃথক মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আসামিপক্ষ সব আসামির বেকসুর খালাস দাবি করেন। সেদিনই এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের (১০ অক্টোবর) তারিখ ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ৫১১ জনের মধ্যে ২২৫ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মোট আসামি ছিলেন ৫২ জন। এই মামলার বিচার চলাকালে আসামি জামায়াতে ইসলামী নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সে হিসেবে বর্তমানে মামলা দুটিতে আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।
এই মামলায় মোট ৩১জন আসামি কারাগারে থাকলেও বাকি ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে ৮ জন জামিনে থাকলেও রায়ের দিন নির্ধারণ করার আগে ট্রাইব্যুনাল তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন-
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে আছেন আর বাকি দুজন পলাতক। কারাগারে থাকা ১৭ জন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। আর পলাতক দুজন হলেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই ও জঙ্গিনেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দীন এবং হানিফ পরিবহনের অন্যতম মালিক মো. হানিফ।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-
রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যরা হলেন- শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল (উপস্থিত), মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব (উপস্থিত), মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির (উপস্থিত), আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক (উপস্থিত), হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া (উপস্থিত), আবু বকর ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার (উপস্থিত), মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (উপস্থিত), মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।