বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিশ্চিহ্ন করতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়। এই নিশ্চিহ্ন প্রক্রিয়ার অন্যতম টার্গেট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’
তিনি বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘটনা, আওয়ামী লীগ নেতাকে দিয়ে পুনঃতদন্ত এবং সবশেষ আদালত কর্তৃক ‘ফরমায়েশি’ রায়- এ সব কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণ এসব কিছুই মেনে নেয়নি। আমরা এই ভয়াবহ গ্রেনেড বোমা হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘কোনো রকম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আক্রোশমূলক এই রায়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির অন্যতম অগ্রনায়ক তারেক রহমানকে প্রহসনের বিচারে সাজা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা এই রায়ের মাধ্যমে মূল দুটি লক্ষ্য পূরণ করতে চাচ্ছেন। এক. শেখ হাসিনার শাসনামলে চারিদিকে যে নৈরাশ্যের ছবি মানুষ অবলোকন করছে সেখান থেকে দৃষ্টি ফেরানো। দুই. তারেক রহমানের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে জিয়া পরিবারকে হেয় করা।’
তিনি বলেন, ‘মঈন-ফখরুদ্দিন গংদের সহায়তায় ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের নিজ বাসভবন থেকে বের করে দেয়া, বিমান বন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শহীদ জিয়া ও বেগম জিয়ার নাম মুছে ফেলা, হত্যার উদ্দেশ্যে কাওরান বাজারে বেগম জিয়ার গাড়িবহরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের আক্রমণ, বালির ট্রাক দিয়ে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ও তার বাসভবন অবরুদ্ধ করে রাখা, একের পর এক সাজানো মামলায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ফরমায়েশী রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখা, সবই করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জিয়া পরিবারকে হেয় করার জন্য।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের জন্য আবেদন করে ১৯ তারিখ তারা পুলিশের অনুমতির কপি পেয়েছে। কিন্তু পুলিশকে কোনো কিছু না জানিয়ে মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশ হঠাৎ তাদের দলীয় অফিসের সামনে নেয়া হলো কেনো? অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে রায়ে সাজা দেয়া হলো। তারা সমাবেশের ভেন্যু সম্পর্কে পূর্বে ওয়াকিবহাল না হলে নিরাপত্তা দিবে কিভাবে? ২১শে আগস্ট হঠাৎ করে দুপুরে ভেন্যু পরিবর্তন খবর শোনার পরেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রচেষ্টা তারা করেছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেরাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়ার কোনো স্পেস রাখেনি। এসব কিছুতে প্রমাণিত হয় তাদেরই কোনো পক্ষ এই ঘটনার নাটের গুরু। এই ঘটনা নিয়ে জনগণ ও সচেতন শ্রেণীর মনে কিছু প্রশ্ন দানা বেঁধেছে।’
সারাদেশের নেতাকর্মীদের পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার, মামলা ও হয়রানির অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, ‘গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন গতকাল কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়ন থেকে পুজামন্ডপ পরিদর্শন করে মোক্তারপুরে অন্য একটি পূজামণ্ডপ সাওরাইট বাজারে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা রামদা, রড ও ভারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ আক্রমণ করে এবং ৮টি মটর সাইকেল ভাংচুর করে। এই আক্রমণে আবদুল্লাহ, সুমন, মো. জাহাঙ্গির, আশরাফ, মোতাল্লিব, সজিব, জয়ফুল ও নয়নসহ ১০ জন মারাত্মক আহত হয়। পরে আবদুল্লাহকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
গ্রেফতারের চিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বগুড়ার সোনাতলা তেকানী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকারম হোসেন মাস্টার, বিএনপি নেতা মো. বিপ্লব হোসেন, মো. শহীদ হোসেন, মো. সিয়াম হোসেন, মো: আপেল মাহমুদ, মো. আতিকুর রহমানসহ ১৭ জনকে একটি ইসলামী জলসা থেকে ফেরার পথে সোনাতলা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে এবং সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকিরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য, ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মিথ্যা অভিযোগে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে। সিলেটের জৈন্তাপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আলতাফ হোসেন বিলালকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আবুল কাশেম, যুবদলের খন্দকার রাশেদুল আলম, মাসুদ তালুকদারসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে গতকাল মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন,চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া,সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।