নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সংলাপের সঙ্গে আন্দোলনও সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ থেকে। পাশাপাশি তারা এও জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধনের সুযোগ সংবিধানের ভেতর রয়েছে। সংবিধানের ১৮ তম সংশোধনী এখন জনগণের দাবি।
মঙ্গলবার ( ৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে বাম নেতারা এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা ৭টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে বসার কথা রয়েছে। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা আগে বাম জোটের নেতাদের কাছ থেকে এমন ঘোষণা এসেছে।
চার দফা দাবি আদায়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বাম জোটের দাবিগুলোর মধ্যে- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ইভিএম ব্যবহার বন্ধের দাবি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশ আজ ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। এ দেশে ভোটাধিকারের আন্দোলন নতুন নয়। দুটি দল (আওয়ামী লীগ- বিএনপি) বিরোধীদলে থাকলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। আবার তারাই ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার সব চেষ্টা করে। তাই দেশের জনগণ তাদের চিরদিন বিরোধীদলে দেখতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘সরকার শুধু সংবিধানের কথা বলে। সংবিধানে বলা আছে, কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না। সে কথা কেন সরকার বলছে না? নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। ফলে সরকারের বক্তব্যই সংবিধানবিরোধী।’
নিজের ওপর আস্থা রাখতে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্য বিষয়ে সিপিবি প্রধান বলেন, ‘ আপনি যে বক্তৃতা করছেন, এমন বক্তব্য কী আইয়ুব খানের মুখ থেকে শোনেননি? জিয়াউর রহমান ও এরশাদের মুখ থেকে শোনেননি? তারপরেও কীভাবে বলেন, আপনার সদিচ্ছার ওপর আস্থা রাখতে?’
ক্ষমতায় থেকে বর্তমান সরকার যেসব অপরাধ করেছে দায়মুক্তির অধ্যাদেশ করেও তা থেকে মুক্তি পাবে না উল্লেখ করে বাম জোটের এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনের নজির মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মানুষ এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ব্যালট ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
সংলাপও করবেন আবার আন্দোলনও করবেন সরকারী দল এবং প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘এ প্রশ্নের জবাব আপনি আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে শিখে নেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু সংলাপ করেছেন ইয়াহিয়ার সঙ্গে পাশপাশি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাই অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংলাপ ও আন্দোলন একইসঙ্গে চালিয়ে যাব।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক কমরেড সাইফুল হক বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তনের সুযোগ সংবিধানের ভেতরে রয়েছে। সংবিধানের ১৮তম সংশোধনীয় আনা বর্তমানে জনগণের দাবি। এখন পর্যন্ত ১৭ বার সংবিধানের সংশোধনী আনা হয়েছে। সরকার চাইলে সংবিধানের সংশোধনীও আনা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সংলাপের মীমাংসা না হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশন তফসিলের তারিখ ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংলাপের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। অথচ তার আগে কীভাবে তফসিল ঘোষণা হবে?’ সংলাপের ফলপ্রসূ সমাধান না আসা পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা স্থগিত রাখার আহ্ববান জানান বাম জোটের এই সমন্বয়ক।
সংলাপ চলাকালীন অবস্থায় বাম নেতাদের বিরুদ্ধে হামলা মামলা চলছে এমন অভিযোগ এনে সাইফুল বলেন, ‘সংলাপের মধ্য দিয়ে সমাধানের সদিচ্ছা দেখাতে চাইলে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে মামলা হয়নি, মামলা হয়েছে নাশকতা, মাদক, জঙ্গি এসব কারণ দেখিয়ে। তাই রাজনৈতিক মামলার তালিকা চাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কৌশলী বক্তব্য।’
নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার আহ্ববান জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো সরকারের আজ্ঞাবহ। এদের পরিচালনায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আন্দোলন করে ভোটাধিকার আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, জনগনের চাপে সরকার আজ সংলাপ করছে। সংলাপে ভোটাধিকার বাস্তবায়নের সঠিক নির্দেশনা না আসলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে মতিঝিল ঘুরে আবার পল্টনে এসে শেষ হবে। সমাবেশের সমাপতিত্ব করেন কমরেড সাইফুল হক।