একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও প্রশাসনের ‘বিতর্কিত’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, তাদের বদলির দাবি জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
রবিবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করে ২০ দলীয় জোটের একটি প্রতিনিধিদল।
বৈঠক শেষে জোটের পক্ষ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এর আগে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ও বদলির দাবি জানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ২০ নভেম্বর সারা দেশে নিয়োগ দেয়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চেয়ে পদমর্যাদায় ঊর্ধ্বতন ৪৫ জনকে মেনটরের (উপদেষ্টা) নিয়োগ বাতিলের দাবি করে সরকারীবিরোধী এই জোট।
এরপর গত ২২ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭০ কর্মকর্তা ও জনপ্রশাসনের শীর্ষ ২২ কর্মকর্তার বদলি চেয়ে ইসিকে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এসব তালিকায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এ বিষয়ে অলি আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিতর্কিত কয়েকজন কর্মকর্তার তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা চাই না, তাদের কোনও ক্ষতি বা কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সময়ে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অন্য কোথাও বদলি করে দেয়া হোক।’
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘দায়িত্ব পালনের সময় তাদের অনেকের সঙ্গে মন্ত্রী ও সরকার দলীয় এমপিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ফলে অনেকের পক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা কঠিন হতে পারে। এ রকম বাস্তবতায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করা ছাড়া অন্য কোনও পন্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। অতীতে এই ধরনের অনেক নজিরও রয়েছে।’
নির্বাচন বানচাল হতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে অলি আহমদ বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো, রিমান্ডে নেওয়া, মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন থানায় অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে মামলা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অজ্ঞাতনামা মামলাগুলোতে গ্রেফতার দেখানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
“এটি সরকারের দুরভিসন্ধি ও নীলনকশা বাস্তবায়নের চক্রান্ত। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, নির্বাচন বানচালও হতে পারে। কোনও ধরনের অঘটন ঘটলে এর দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেও বহন করতে হবে”- যোগ করেন কর্নেল অলি।
তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালনের সময় অন্ধকারে ব্যালট পেপার কেটে সরকারি দলের প্রার্থীদেরকে জয়যুক্ত করেছেন। অনেকে হয়তো চাকরি রক্ষার জন্য আত্মসমর্পন করেছে। ফলে জনগণ ভোটের অধিকার ও কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছে।’
ইসি এখন পর্যন্ত জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে নাই বলেও অভিযোগ করে ২০ দলীয় জোট।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগী সব ব্যক্তির সুযোগ-সুবিধা বন্ধের দাবিও জানায় এই জোট। তাদের অভিযোগ, ইসির পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও সরকারি দলের এমপি-মন্ত্রীরা সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছে।
নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারি রেডিও ও টেলিভিশন নির্বাচন কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা বাঞ্ছনীয় বলেও দাবি করে এই জোট।
২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, পুলিশের মতো সশস্ত্র বাহিনীকেও নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া, ১৫ ডিসেম্বরের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও টহল দেওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা প্রয়োজন। প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকায় ১১ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা জরুরি। ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
অলি আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের অনেক মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের নিরাপত্তা রক্ষী পেয়ে থাকেন। একইভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব সদস্যদের ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিবদের নিরাপত্তা দেওয়া যুক্তিযুক্ত। তা না হলে কমিশন পক্ষপাতিত্ব করছে বলে প্রতীয়মান হবে।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার সময় ২০০ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও করেছে ২০ দলীয় জোট। এটা গুজব নাকি সত্য তা পরিষ্কার নয় বলেও জানায় এই জোট।