নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
৩৫ দফা সম্বলিত ইশতেহারের তৃতীয় দফায় ঐক্যফ্রন্ট উল্লেখ করেছে, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা হবে, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, গণমাধ্যমের ওপর কোনো রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, সামাজিক গণমাধ্যমে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারী বিধি নিষেধ থাকবে না।
এই ধারায় আরো বলা হয়, সরকারি পদক্ষেপ এবং পদধারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, এমনকি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপেরও অধিকার থাকবে। এসব ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে মানহানির মামলা তার নিজেকেই করতে হবে (অন্য কেউ করতে পারবে না) এবং এই ধরনের মামলা কোনোভাবেই ফৌজদারি মামলা হবে না।
ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেছে ২৪ নং দফায়। এতে একটি স্বাধীন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে সকল প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এই দফায় আরো বলা হয়, সাংবাদিকদের মজুরি বোর্ড নিয়মিত করা, ইভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমকে উৎসাহিত করা হবে। এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে, ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হবে, সংবাদপত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হবে এবং এতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হবে।
সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হবে’ মর্মে ইশতেহারে একটি পৃথক ধারা সংযুক্ত করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়াও সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ সকল ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক নিগ্রহের বিচার হবে এবং কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয় ইশতেহারে।
ইশতেহারে ২৫ দফাটি হলো ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’। এর প্রথমেই মোবাইলের কলরেইট এবং ইন্টারনেট এর খরচ কমানোর কথা বলা হয়। এছাড়াও বলা হয়, দেশের প্রতিটি প্রান্তে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের বাধ্য করা হবে, দেশের বিভিন্ন গণজামায়েত এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিনামূল্যে ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা করা হবে, সারা দেশে আরও আইটি পার্ক স্থাপন করা হবে, সারা দেশের ভূমি রেকর্ড পুরোপুরি ডিজিটাল করা হবে, ই-গভর্নেন্স এর ব্যপ্তি বাড়ানো হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ইত্যাদি ভিত্তিক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে এবং প্রয়োজনীয় কর্মী প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।
‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’-এই স্লোগান নিয়ে সোমবার রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে আনুষ্ঠানিভাবে এই ইশতেহার দেয় ঐক্যফ্রন্ট।
ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি শুরুতে বলেন, নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সকল নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐক্যমত্য, সকলের অন্তর্ভুক্তি এবয়ং যে কোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত থাকা। ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সংবিদানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা। রাষ্ট্রের এই মালিকানা শুধুমাত্র নির্বাচনে যেতা দলের মানুষের নয়, এই মালিকানা থাকবে নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদেরও
তিনি বলেন, এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারকে সাম্প্রতিককালের একটি বৈপ্লবিক ইশতেহার হিসেবে ঘোষণা করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি এই ইশতেহারে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।