নির্বাচনে ‘ভরাডুবি’র পর প্রথম মূল্যায়ন সভায় ভোটের মাঠে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নানা রকম ‘ঘাটতি’, ‘কমতি’ ও ‘সমন্বয়হীনতা’র বিষয় উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। ভোটগ্রহণের ৩০ ঘণ্টা পর সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান এতে সভাপতিত্ব করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ধানের শীষের ‘অবিশ্বাস্য ভরাডুবি’র কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের ‘বৈরী আচরণে’র পাশাপাশি ভোটের মাঠে নিজেদের নানা রকম ঘাটতি, কমতি, সমন্বয়হীনতা ও জোটের প্রধান দল বিএনপির অসহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন জোটের শীর্ষ নেতারা। কিছু কিছু বিষয়ে জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেন তারা।
সূত্রমতে, বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের একজন মহাসচিব জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চান, জোটের অন্যতম শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি জোটের বাইরে থাকা দল বাংলাদেশ মুসলীম লীগের হারিকেন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন— বিষয়টি তিনি জানেন কি না?
শরিক দল হওয়া স্বত্ত্বেও জোটের বাইরে থাকা কোনো দলের প্রতীক নিয়ে কেউ নির্বাচন করলে সেটা জোটের নীতি, আদর্শ ও গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কি না এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করায় সাইফুদ্দীন আহমেদ মণির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না?— নজরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চান শরিক দলের ওই মহাসচিব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আলোচনার টেবিলে বিষয়টি উত্থাপনের পর জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বৈঠকে উপস্থিত সাইফুদ্দীন আহমেদ মণিকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করলেন কেন?
এসময় সাইফুদ্দীন আহমেদ মণির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। জোটের অন্য শরিকরাও সাইফুদ্দীন আহমেদ মণির বিরুদ্ধে জোটের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কাজ করার অভিযোগ তুলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমি জানতাম সাইফুদ্দীন আহমেদ মণি নির্বাচন করছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) থেকে! তিনি জোটের বাইরে থেকে নির্বাচন করছেন— এমনটি আমার জানা ছিল না।
পরে সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জোট আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। আমার নিজের দলেরও নিবন্ধন নেই। নিরুপায় হয়ে জোটের বাইরে থাকা দল মুসলিম লীগের প্রার্থী হয়েছিলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জোটের প্রধান সমন্বয়ক হয়েও জোট শরিকরা কে কোন দলের হয়ে বা কে কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, সে সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান ওয়াকিবহাল না থাকায় জোটের শীর্ষ নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। কেউ কেউ ব্যক্ত করেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলগুলোর জন্য ৫৯টি আসন ছেড়ে দেয় বিএনপি। এর মধ্যে ২২টি জামায়াত, ১৯টি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বাকি ১৮টি পায় ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিকরা। কিন্তু জোট শরিক সাইফুদ্দীন আহমেদ মণির ডেমোক্রেটিক লীগ বিএনপির কাছ থেকে কোনো আসন পাননি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বেগম জুবেদা কাদের চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী হয়ে হারিকেন প্রতীকে নির্বাচন করেন ক্ষুব্ধ সাইফুদ্দীন আহমেদ মণি।
কিন্তু এই খবরটিই জানতেন না জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। অবশ্য ভোটের পর প্রথম মূল্যায়ন সভায় নিজের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জোট শরিকদের তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বিষয়টি তিনি তুলবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এ প্রসঙ্গে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি জোটে থেকে আরেকটি জোটের মনোনয়ন এবং প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সাইফুদ্দীন আহমেদ মণি কাজটি ঠিক করেছেন কি না— সে বিষয়টি আমরা জানতে চেয়েছি। জবাবে নজরুল ইসলাম খান বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’