আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে আনার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান আমাদের চেতনার অক্ষয় দ্যূতি কবি আল মাহমুদের ইন্তেকালে গোটা দেশবাসীর সাথে আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। কিংবদন্তিতুল্য কবির প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’
রিজভী বলেন, ‘কবি আল মাহমুদের মরদেহ শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি তার মরদেহ শহীদ মিনারে আনতে দেয়া না হয়। তাহলে এটিই প্রমাণিত হবে যে, এই সরকারের কাছে ভিন্নমতাবলম্বী আদর্শের মানুষের কোন মূল্য নেই। কবি আল মাহমুদ একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই পরিচয়ের পরও যদি তার মরদেহ শহীদ মিনারে আনা না হয় তবে প্রমাণিত হবে শহীদ মিনারও দলীয়করণ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মিডনাইট ভোটের এই সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে মিয়ানমারও বাংলাদেশকে নিয়ে দু:সাহস দেখাচ্ছে। বারবার মিয়ানমার সরকারিভাবে তাদের ওয়েবসাইটে সেদেশের মানচিত্রে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নিজের অংশ হিসেবে দেখাচ্ছে। সেদেশের আরাকান রাজ্যের দশ লাখের বেশী রোহিঙ্গা অধিবাসীকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছে। এখন সেখানকার সংখ্যালঘু উপজাতিদেরও তাড়িয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে। এ নিয়ে জাতির ঘাড়ে জোর করে চেপে বসা আওয়ামী দানব সরকার কিছু করতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক, বরং মিয়ানমারের বাংলাদেশ-বিরোধী নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সারাবিশ্বে যখন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছিলো সেসময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হচ্ছে না কেবলমাত্র মিড নাইট সরকারের নতজানু নীতির কারণে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে মিয়ানমার তাদের দেশের অংশ করে নিতে চাইবে আর আমরা কিছুই করবো না! শুধু দূতকে ডেকে নিয়ে প্রতিবাদ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা একবার না কয়েকবার একই ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেও মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন, জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়সহ সে দেশের অন্তত তিনটি ওয়েবসাইটের মানচিত্রে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে তাদের দেশের অংশ হিসাবে দেখানো হয়। তখনও এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার কেবল নামকাওয়াস্তে প্রতিবাদ করে চুপ হয়ে যায়।’
রিজভী বলেন, ‘এই সরকার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হেফাজত করতে ব্যর্থ হচ্ছে, কারণ তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশ ও মানুষের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। রাতের অন্ধকারে কা-পুরুষের মতো জনগণের ভোট ডাকাতি করে তারা মসনদ দখল করেছে। দেশ গোল্লায় যায় যাক তাতে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। তারা সারাক্ষণ ব্যস্ত কিভাবে দেশের জনগণকে দমন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা যায়। শেখ হাসিনার নির্দেশে সমস্ত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ একটাই, তাহলো আওয়ামী লীগ বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দেয়া, গ্রেফতার করা, জেলে ভরা, গুম-খুন ও বিচার-বহির্ভূত হত্যা করা। কিন্তু এভাবে কি ক্ষমতায় থাকা যাবে ? কখনোই যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় কি চলছে ? সেখানে বিজিবির গুলিতে নিহতদের পরিবারে যখন শোকের মাতম চলছে তখন নিহতদের নামে আবার মামলা দেয়া হয়েছে। হরিপুর উপজেলা বহরমপুর ও রুহিয়া গ্রামের ২৭২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে বিজিবি। একটি মামলার এজাহারে বিজিবি’র গুলিতে নিহত শিক্ষক নবাব আলী ও কৃষক সাদেক আলী নামও রয়েছে। মামলার ভয়ে, আতংকে ওই গ্রাম এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা। সীমান্ত পাহারা দেয়ার কাজ বিজিবি’র। কিন্তু তারা সীমান্ত পাহারা না দিয়ে বিএসএফ এর মতোই বাংলাদেশিদের হত্যা করছে।