কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, অথচ তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না, তাকে এক প্রকার মেরে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসনকে কারাগারে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে তাকে তীলে তীলে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যান্ত ক্ষোভ এবং আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জনগণের ভালবাসায় শিক্ত, জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা সর্ববৃহত রাজনৈতিক দলের নেতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজা দিয়ে একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন তিনি যখন কারাগারে গিয়েছিলেন তখন সুস্থ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে হেটে কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপরে দেখলাম তিনি অত্যান্ত অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গত প্রায় সাড়ে তিন মাস দেশনেত্রীর অসুখগুলো আরও বেড়ে গেছে। বাম কাধে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডান কাধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে। বাম-বাহু ও কব্জিতে ব্যথা অনেক বেড়েছে। ফলে কারও সাহায্য ছাড়া তিনি দাড়াতে কিংবা চলতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা ও কাপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না।’
‘আদালতের নির্দেশে করা মেডিকেল বোর্ড সাড়ে ৩ মাস পরে গত পরশু তাকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। তারা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন, গত সাড়ে তিন মাসে তার কোনো রকম ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়নি। এক্সরে করা হয়নি। ব্লাড প্রেসার মাপা হয়নি। অর্থাৎ কোনো চিকিৎসা করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগে পরিবার প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে পারতো, এখন ১৫ দিনের আগে কোনো মতে দেখা করতে দেয়া হয় না। দলের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে ইতোপূর্বে কয়েকবার দেখা করেছি। চার মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়নি। এমনকি তাঁর আইনজীবীরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেয়া হচ্ছে, এর কোনোটার কোনো ভিত্তি নেই। ইতোমধ্যে যে তিনি জামিন পেয়েছিলেন তারও কোনো সুবিধা তাকে গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। আপনারা জানেন প্রায় ৩০টি সম্পূর্ণ সাজানো মামলা তাঁর বিরুদ্ধে দিয়ে একটার পর একটা নিয়ে আসা হয় আর লোয়ার কোর্টে গেলে অনেক দিন পরে আবার তারিখ দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশবাসীর কাছে জানাতে চাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ তার প্রাপ্য নয়। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। বিলম্ব করলে দেশনেত্রীর যদি কোনো শারিরীক ক্ষতি হয়, তার সমস্ত দায় দায়িত্ব এই সরকারকে, যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় তাদের গ্রহণ করতে হবে। তারা যে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে সেই রাজনীতির জন্য তারা দায়ী থাকবে।
অবিলম্বে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার দলের পক্ষ থেকে বহন করতে রাজি আছি।’
খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখনও তিনি এই দেশের সর্ববৃহত রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তাঁর নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ন্যায়বিচার তার প্রাপ্য।’