বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আজকে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তাতে কারও জীবন নিরাপদ নয়। কারও জীবনের কোনো স্বাধীনতা নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারকে বিদায় দিতে হবে। এজন্য ঠাণ্ডা মাথায় বাস্তবধর্মী পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘৩০ ডিসেম্বর এবং অতঃপর’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম নামের একটি সংগঠন। সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মো. মোশাররফ হোসেন, শাহ মো. নেছারুল হক, শাহরিয়া ইসলাম শায়লা, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
মঈন খান আরও বলেন, ১০ বছরে বর্তমান স্বৈরাচারী শাসনামলে অনেক মানুষ জীবন দিয়েছেন। কেন জীবন দিয়েছে- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে? খালেদা জিয়াকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। কারণ তার একটিমাত্র অপরাধ তিনি এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, আজকের সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের সঙ্গে গুণগত ব্যবধান আছে। আজকের আন্দোলনের সঙ্গে ’৫২, ’৬৯, ’৯০-এর আন্দোলনের সঙ্গে গুণগত ফারাক থাকতে হবে। ফারাক না থাকলে এ আন্দোলন সফল হবে না। হুট করে রাস্তায় নেমে দুটি স্লোগান দিলাম। কিন্তু এ সরকার আপনাকে ছাড়বে না। ওই সরকারকে কাবু করতে হলে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছে।
কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্তি করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে অনুরোধ করব, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। আপনারা ঠাণ্ডা মাথায় থাকুন।
আপনারা গণতন্ত্রের পথে থাকুন, শান্তির পথে থাকুন। নিশ্চয়ই আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কিছু ভুলের কথা স্বীকার করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এতে আমাদের অবশ্যই কিছু আচরণ ও উচ্চারণে ভুল ছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা শীর্ষ নেতারা কেন মনে করলাম সামরিক বাহিনী মাঠে নামলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সমগ্র জনগোষ্ঠীকে ভোটের জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে কিন্তু প্রতিরোধ করার জন্য বলা হয়নি।
তিনি বলেন, বিজিবি চুপচাপ থাকলে এবং সেনাবাহিনীর না থাকলে আন্দোলনের আরেকটা ঢেউ তৈরি হতো। আর এ ঢেউ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত। তিনি বলেন, এ সরকারের কাছে দাবি করে লাভ হবে না, আদায় করে নিতে হবে।
মান্না বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে লড়াই করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা লড়াই কী করতে পেরেছি? সেই লড়াই কী খালেদা জিয়ার মুক্তির লড়াই, বাংলাদেশের মুক্তির লড়াই? সেই লড়াই এখন পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী যারা জেলে আছেন, তাদের মুক্তির লড়াই? আমরা জানি যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না বলেন, খুব স্পষ্ট যে, আমরা এ সরকারের কাছে করুণা ভিক্ষা চাই না। এ সরকারের কাছে কোনো সদ্ব্যবহার প্রত্যাশা করি না। আমরা মনে করি, যা পাব তা আদায় করে নিতে হবে। করুণা করে কিছু পাওয়া যাবে না। আন্দোলন করতেই হবে।