আওয়ামী লীগ বলতে দেশে কিছু নাই এমন দাবি করে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘পুলিশ অফিসার, পুলিশ কমিশনার, এসি, ডিসিরা এখন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ শেষ।’
তিনি বলেন, ‘আমি লিখিত ভাবে দিতে পারি। যদি এই দেশে ফেয়ার নির্বাচন হয়, আগে তো ১০টি সিট দিতাম, এখন শেখ হাসিনার জেতাও কষ্ট হয়ে যাবে।আওয়ামী লীগের মাজা শেখ হাসিনা কি ভাবে ভেঙে ফেলেছেন। বিএনপির মাজা ভাঙেন নাই, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মাজা ভেঙে ফেলেছেন।’
রবিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদাসহ দলের সকল কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমাদের ডিজিটাল প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন ছাড়া প্রধানমন্ত্রী, গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী সবকিছু দেখতে পারেন। ব্যাংক দেখতে পারেন, টাকা দেখতে পারেন, আত্মীয়দের দেখতে পারেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের কিভাবে জেলে ভরতে হয়, নির্যাতন করতে হয় তা দেখতে পারেন কিন্তু শিক্ষকদের যে সমস্যা তার নজরে আসে না। এমন একটা দেশে আমরা গত ১২ বছর ধরে বসবাস করছি। ভয়ঙ্কর বিপদ, সংকটময় এমন একটি দেশের নাম বাংলাদেশ।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৫ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা যারা মানুষ গড়ার কারিগর তারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কথা বলার চেষ্টা করছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী ১৫ থেকে হাত বা ১৫/২০ মিনিট দূরে থাকে। অথচ তিনি শিক্ষকদের কথা শুনছেন না।’
বেগম খালেদা জিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী উল্লেখ করে দুদু বলেন, ‘তিনি আমার নেত্রী বলে বলছি না। বেগম জিয়া দেশের খুবই জনপ্রিয় নেত্রী। শহীদ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় এবং তার মৃত্যুর পরে বেগম খালেদা জিয়া যে সুযোগ সুবিধা পেতেন তার সব কিছু ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন স্বৈরাচারী আইনের বিরুদ্ধে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তিনি ৯/১০ বছর আন্দোলন করেছেন। তার অনেক সহকর্মী এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল। কিন্তু তিনি একা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে গেছেন আপোষ করেননি। যে কারণে তিনি আপোষহীন নেত্রী। তিনি গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় প্রায় দেড় বছর ধরে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে।’
দুদু বলেন, ‘দেশনেতা তারেক রহমানের নামে যে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেই মামলার প্রথম রায় বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের সাজানো বুদ্ধিতে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।’
নির্বাচন করে এই সরকার ক্ষমতায় আসে নাই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কি জিনিস ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলে মানুষ দেখেছে। আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন নামে তামাশা এর আগে কোনো সরকারে আমলে মানুষ দেখেনি। নির্বাচন নিয়ে তামাশা হানাদার বাহিনী, পাকিস্তানি বাহিনী, ব্রিটিশ বাহিনীর কেউ পারেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা পেরেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বিএনপি করি আমাদেরকে এসবের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বেগম জিয়াকে সারা জীবন জেলে রাখবে এটা সম্ভব না, কোনোকালেই সম্ভব না। সাময়িকভাবে আটকে রাখতে পারেন। তিনি বের হবেন, শুধু বের হবেন না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। যেমন গতবার করেছেন। বের হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। এবং রাস্তার় হত্যা বন্ধ হবে, আইনের শাসন নাই বলেই রাস্তায় এতো হত্যা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন নাই বলে শিক্ষকরা ভোট চুরির দায়ে মেয়েদের কাছে অপমাণিত হয়ে এখনও শিক্ষকতা করছে।’
দুদু বলেন, ‘যে পার্লামেন্টের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল। সেই পার্লামেন্ট এখন দুর্নীতির প্রতীক। পার্লামেন্টে বর্তমানে যারা আছেন তাদের বউরাও তাদের দিকে যখন তাকায় মনে হয় বলে এই চোরটা আবার ঘরে এসেছে। এ পার্লামেন্টে যারা সদস্য আছে তাদের ছেলে-মেয়েরা যখন তার বাবার দিকে তাকায় আমার মনে হয় তারা বলে এই চোরটা আবার ঘরে আসলো। এই পার্লামেন্ট বঙ্গভবন, গণভবনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।’
আন্দোলন বলে কয়ে আসে না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আইয়ুব খানও বুঝে নাই, এরশাদও এক সপ্তাহ আগে বুঝে নাই তার পতন হবে। শেখ হাসিনাও এখন বুঝতেছেন না। হঠাৎ করে দেখবেন তার পতন হয়ে গেছে। দেশের সব জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। এটা হবে দেশের তৃতীয় গণঅভ্যুত্থান।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘হতাশ হওয়ার কিছু নাই। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান আছেন। বিএনপি আছে, দেশের মানুষ তাদের ওপর ভরসা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কৃষক দলের যুগগ্ম-আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন মাস্টার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আকতার হোসেন বাচ্চু, আজম খান, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিয়া মোহাম্মাদ আনোয়ার প্রমুখ।