প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার সুফল জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যসেবার আরও ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানোর জন্য পর্যায়ক্রমে দেশে আরও ৮টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।
জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ও জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিকার-শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ’পালিত হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে শুধু সরকার একা নয়, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা মানুষের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারব। বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার জন্য এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুযোগ দিচ্ছি। শিশুদের ইনকিউবেটর মেশিন আনার বিষয়ে ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ও গ্যাভি অ্যাওয়ার্ডের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন, পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল নিয়োগ, পরিবার পরিকল্পনা, নার্সিং সেবার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, আইন ও নীতিমালা প্রণয়নসহ স্বাস্থ্যখাতে তার সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। ফলে সমাজের সকল স্তরের জনগণের প্রয়োজনীয় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি বহুলাংশে লাঘব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্রাম পর্যায়ে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত নির্মিত প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার প্রশিক্ষিত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এ পর্যন্ত ৮৫ কোটিরও বেশি পরিদর্শনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের এ উদ্যোগ সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসময় বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিপ গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।