জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঈদ এবারও কাটবে কারা হেফাজতে। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করায় সেখানেই থাকছেন এই ঈদেও। সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতেমা। ফাতেমার তৈরি খাবার ও আত্মীয়-স্বজনের নিয়ে যাওয়া খাবার খেয়ে পঞ্চমবারের মতো বন্দি অবস্থায় ঈদ করবেন তিনি।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বিএনপি ও সরকারপক্ষ পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে। বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। গত ২৪ মে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন করেন চিকিৎসা না দিয়ে সরকার কী খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়? তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বন্দি অবস্থায় খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারকেই বহন করতে হবে।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক গত ২৯ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, অনেক ভালো আছেন। ১ মাস ২৯ দিন আগে ভর্তি হওয়ার সময় ওনার শারীরিক যে সমস্যা ছিল, সে অবস্থানের চেয়ে দুই মাসে অনেক উন্নতি হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কে মাহবুবুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর্থারাইটিসের অনেক উন্নতি হচ্ছে। তার জিহ্বায় যে ঘা হয়েছিল, সেটা আমাদের প্রায় সবার মুখেই হয়। সেটা অন্য কিছু না। জিহ্বার ঘা ৯০ শতাংশ সেরে গেছে। তিনি রোজা রাখছেন। ছোলাসহ অন্য স্বাভাবিক খাবারও খাচ্ছেন।
জানা যায়, এবার ঈদের দিন দলের সিনিয়র নেতারা প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। এরপর কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বিএসএমএমইউ যাবেন। সেখান থেকে বনানীতে খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন।
ঈদের দিন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
এবার নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে ঈদ হবে পঞ্চমবার। এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দু’টি ঈদ কারাগারে কাটাতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঘোষিত সাবজেলে ওই দুই ঈদে খালেদা জিয়ার পাশের আরেকটি সাবজেলে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
এর আগে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে গ্রেফতারের পর নেওয়া হয় সিএমএম আদালতে। ওই আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সাবজেলে থাকার সময় ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম উদযাপিত হয় রোজার ঈদ। এরপর ২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর কোরবানির ঈদও ওই সাবজেলেই উদযাপন করেন তিনি। ওই কারাগারে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে মুক্তি পান।
খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর কয়েকবার গ্রেফতার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হন। তবে তখন তাকে বেশিদিন বন্দি থাকতে হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে পারেন। তারেক রহমানের পরিবার, কোকোর স্ত্রী ও মেয়েরা লন্ডনে থাকায় খালেদা জিয়ার ভাই, বোন ও তাদের ছেলে-মেয়েরা কারাগারে দেখা করতে যাবেন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।