বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির শূন্য পাঁচ পদের মধ্যে দুটি পূরণ করা হয়েছে। বাকি তিনটি পদও শিগগিরই পূরণ হবে, সে আশায় নেতাকর্মীরা। এনিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
তবে দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, এ বিষয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতা দেয়া আছে। প্রয়োজনে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র মতে, বিভাগীয় কোটায় স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের চিন্তা করছে দলীয় হাইকমান্ড। যেসব বিভাগের একাধিক নেতা স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন সেখান থেকে একজন-কে অব্যাহতি দিয়ে অন্য বিভাগের কোটা পূরণ করা হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক আগে যেসব এলাকায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন সেসব এলাকার সর্বোচ্চ নেতাদের দলের শীর্ষ ফোরামে রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। সেই চিন্তার বাস্তব রূপ দিতে রাজশাহী বিভাগের কোটায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদাধিকারবলে স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। সম্প্রতি নতুন দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় কমিটির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬-তে। ফাঁকা রয়েছে আরও তিনটি পদ।
রংপুর ও কুমিল্লা বিভাগে দুজন করে স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য রয়েছেন। ওই দুই বিভাগ থেকে একজন করে রেখে বাকি দুজনকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে।
কুমিল্লা বিভাগের কোটায় নতুন করে ফেনীর আবদুল আউয়াল মিন্টু ও অধ্যাপক শাহিদা রফিকের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে একজন জায়গা পেতে পারেন স্থায়ী কমিটিতে।
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে স্থায়ী কমিটিতে দুজন রয়েছেন। নতুন করে এ বিভাগ থেকে আবদুল্লাহ আল নোমান, এম মোরশেদ খান ও গিয়াস কাদের চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এ তিনজনের মধ্যে একজন জায়গা পেতে পারেন।
ঢাকা শহরের কোটায় স্থায়ী কমিটিতে দুজন থাকলেও সাদেক হোসেন খোকা দেশে থাকলে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে তিনি বিবেচ্য হতেন। এছাড়া ঢাকার আশপাশের জেলা নরসিংদীর একজন রয়েছেন স্থায়ী কমিটিতে।
মুন্সিগঞ্জের অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কাশেম মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) দল পরিবর্তন এবং এম শামসুল ইসলামের মৃত্যুর পর এ জেলা থেকে স্থায়ী কমিটিতে কেউ জায়গা পাননি। সে বিবেচনায় জেলার সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আলোচনায় রয়েছেন।
তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর পর হান্নান শাহকে গাজীপুরের কোটায় স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হলেও তার মৃত্যুর পর সেখানে ওই মানের নেতা তৈরি হয়নি।
এছাড়া আব্দুল মতিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জের কোনো নেতা স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাননি।
তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর খুলনা বিভাগের কোটায় দলের সর্বোচ্চ নেতা রয়েছেন শামসুজ্জামান দুদু। ময়মনসিংহ বিভাগের কোটায় রয়েছেন এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ বিভাগের ড. এম ওসমান ফারুক দেশে থাকলে তিনি এ পদের জন্য বিবেচিত হতেন।
বেগম সেলিমা রহমানকে বরিশালের কোটায় স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হলে এ বিভাগের অন্য কারও সম্ভাবনা নেই। তবে তাকে নারী কোটায় স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হলে এ বিভাগে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের মধ্য থেকে একজন জায়গা পেতে পারেন স্থায়ী কমিটিতে।
কে এম ওবায়দুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেনের মৃত্যুর পর বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কাউকে দেখা যায়নি স্থায়ী কমিটিতে। এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর স্থায়ী কমিটিতে জায়গা নেয়ার মতো নেতা তৈরি হয়নি সিলেট বিভাগে। ফলে এ বিভাগের কোটা ফাঁকা থাকছে।
দলের আরেকটি সূত্রের দাবি, বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত কম বয়স্কদের স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই দেয়ার চিন্তা করছে হাইকমান্ড। এ কারণে আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদকে স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হয়েছে। নতুন করে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নেয়া হলেও নোমান মোয়াজ্জেমদের নেয়া হয়নি।
বাকি যে কয়টি শূন্য পদ রয়েছে এবং বার্ধক্যজনিত কারণে যাদের অব্যাহতি দেয়া হতে পারে সেসব পদে ছাত্রদল-যুবদল থেকে আসছেন বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন এমন নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন। সেই বিবেচনায় শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, লায়ন আসলাম চৌধুরী ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে শিগগিরই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলেও দাবি ওই সূত্রের।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজনের অনুসারীরা এসব নেতার স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, শামা ওবায়েদ, সংস্কারপন্থী জহির উদ্দিন স্বপনসহ বেশ কয়েকজনও স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠন ও প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা আক্ষেপ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি লিমিটেডের সম্মানিত চেয়ারম্যান যাকে যুৎসই মনে করবেন তাকেই ডিরেক্টর নিযুক্ত করবেন। সে বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে গুলশান কার্যালয়ের শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, ফাতেমা বেগম কিংবা নয়াপল্টনের রেজাউল করিমও যদি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।’
দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের শূন্য পদ পূরণ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্য নিয়োগের এখতিয়ার চেয়ারপারসনের। তিনি যখন মনে করবেন তখন নিয়োগ দেবেন। এটা একান্তই তার ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘বাকি সদস্যরাও ভাইস চেয়ারম্যান থেকে আসবেন এমন কোনো কথা নাই। উপদেষ্টা থেকে আসতে পারেন বা অন্য যেকোনো লেভেল থেকেও আসতে পারেন।’