গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতালের ডাক

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমানোর দাবিতে ৭ জুলাই রোববার দেশব্যাপী আধা বেলা (সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত) হরতালের ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

আজ সোমবার রাজধানীর কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তিভবনে বাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক জরুরি সভায় হরতালের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জোটের সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু। সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্কসবাদী) শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাজ্জাদ জহির চন্দন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মানস নন্দী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ ৭ জুলাই হরতাল পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম গতকাল রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বাসাবাড়িসহ সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন, যা আজ সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধির ফলে আবাসিক গ্রাহকদের রান্নাঘরে যাদের এক চুলা আছে, তাদের ৭৫০ টাকার পরিবর্তে প্রতি মাসে দিতে হবে ৯২৫ টাকা। আর দুই চুলার গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৮০০ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।

গৃহস্থালিতে যাদের গ্যাসের মিটার রয়েছে, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের জন্য ৯ টাকা ১০ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করে দিতে হবে। মিটারে ৩৮.৪৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে।

বিইআরসি প্রধান বলেন, গড়ে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭.৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ্যাসের বর্ধিত মূল্য অনুযায়ী, যানবাহনে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম সোমবার থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা হবে। সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাসের জন্য সরকারকে প্রতি ঘনমিটারে ৩২ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা করে দেবে।

বাণিজ্যিক ভোক্তারা যেমন রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শিক্ষার্থী হোস্টেল, হোস্টেলগুলোকে প্রতি ঘনমিটারের জন্য ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৩ টাকা দিতে হবে।

শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাসের মূল্য ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালিকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৭.৭৬ টাকার পরিবর্তে ১০.৭০ টাকা দিতে হবে। চা বাগানের ক্ষেত্রেও একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের মূল্য বাড়েনি।

সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য গ্যাসের মূল্য ৪৩.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য হবে ৩.১৬ টাকার পরিবর্তে ৪.৪৫ টাকা। সার কারখানাগুলোতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য হবে ৪.৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ২.৭১ টাকা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দ্রুতই বিদ্যুতের দামও বাড়বে।

বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির কারণে যে লোকসান হচ্ছে, তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য গ্যাসের মূল্য ৭৫ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন।

‘এলএনজি আমদানির কারণে যে লোকসান, তা পূরণে অতিরিক্ত ১৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন।’

তবে মিজানুর রহমান বলেন, ৩৩ শতাংশ, অর্থাৎ আট হাজার ৬২০ কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং ২৯ শতাংশ, অর্থাৎ সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা সরকার থেকে ভর্তুকি দেওয়া হবে, বাকি দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা ভোক্তাদের টাকায় গঠিত গ্যাস উন্নয়ন ফান্ড থেকে দেওয়া হবে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিদিন ৮৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট (এমএমসিএফডি) এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ধরে নিয়ে এই হারে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছিল।