ডিজিটাল আইন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে: জয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এর ফলে অনলাইনে উসকানি ও সহিংস প্রচারণা থেকে নাগরিকরা নিরাপদ থাকবেন।

মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত এক কলামে তিনি এ কথা বলেন। ১ জুলাই লেখাটি প্রকাশিত হয়।

জয় বলেন, দ্রুতগতিতে ডিজিটাল যুগের দিকে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। নাগরিকদের তথ্য ও গোপনীয়তার সুরক্ষায় গত বছর সংসদে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাস হয়। এর ফলে অনলাইনে উসকানি ও সহিংসতামূলক প্রকাশনা থেকে নিরাপদ থাকবেন তারা। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন আইন বিদ্যমান।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও এনজিও গুরুত্বপূর্ণ এ আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, এ আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

তবে এটা সত্যি নয়। বাংলাদেশে অনেক মুক্ত গণমাধ্যম চর্চা হচ্ছে। এখানে ৯টি জাতীয় দৈনিক রয়েছে এবং তিন শতাধিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে।

অনেক সংবাদে সরকারের সমালোচনাও করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম হয়তো সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে সংবাদ পরিবেশন করে, কিন্তু প্রায় ৩০টির মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে যারা ঘটনা যা ঘটে সেটাই সংবাদ হিসেবে তুলে ধরে। নিয়মিত সরকার, রাজনীতিবিদ ও তাদের নীতির সমালোচনা করে।

একই ঘটনা আপনি ২২০টিরও বেশি স্বাধীন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে দেখতে পারবেন। তিনি বলেন, সরকার সংবাদমাধ্যমগুলোকে দমন না করে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যেন সংখ্যালঘুরা কথা বলতে পারেন। সরকার সব ধরনের সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে নাগরিকের সুরক্ষার জন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে।

কিন্তু ডিজিটাল মিডিয়া যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, তাই এ আইনও দিনে দিনে পরিশোধিত হবে। অন্যান্য সব আইনের মতোই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও নিখুঁত নয়।

স্বাধীনতায়ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে; আর গণতন্ত্র অনেক জটিল। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দুটোই রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাগরিকদের সুরক্ষার মাধ্যমে এই দুটি বিষয়ই নিশ্চিত করতে চায়। এই সমন্বয়টা খুব সরল নয়; এর ভারসাম্য রক্ষা করাও কঠিন।

আইনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। তবে এটা সহজ নয়। অনেক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই আইনের আওতায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আদালত এখনও কাউকে এই আইনে দোষী সাব্যস্ত করেননি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দপ্তরের তৈরি করা এই আইনের খসড়া নিয়ে সংসদে ও গণমাধ্যমে এবং আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। সাংবাদিক, সম্পাদক ও এমনকি এডিটর্স গিল্ড এই আইন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে, যা এটির চূড়ান্ত রূপ দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ফলে আমরা বুঝতে পারি যেহেতু এখন নতুন প্রযুক্তি এসেছে, তাই এই আইন পরিবর্তন করা দরকার। কর্তৃপক্ষও তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারবে, এটা কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

তবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর যেন শোনা যায় সেটা নিশ্চিত করেই ডিজিটাল চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল ও সাইবার হয়রানি থেকে নাগরিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে সরকারকে। এই আইনের একটি ধারায় ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদ থাকে। অন্যান্য ধারাতেও ক্ষমতাহীনদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য তথ্য ছড়ালে সাজার ব্যবস্থা রেখে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৩০ লাখ মানুষের তথ্য সংরক্ষণের জন্যও এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। যেমন জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য ১৫টি দেশের মতো এই আইন মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোকে নিষিদ্ধ বিবেচনা করে।

বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, এমন বিষয় সতর্ক থাকা দরকার। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু। ভুল তথ্য বা সংবাদ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যেমন, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে দেখা যায় মুসলমানদের পবিত্র কাবা শরিফে এক হিন্দু দেবতার মূর্তির ছবি। এর প্রতিবাদে উগ্রবাদী মুসলিমরা নাসিরনগরে হিন্দুদের ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর করে। ছবিটি স্পষ্টতই ফটোশপ করা ছিল, তবে সেদিকে কেউ খেয়ালই করেনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমন আচরণকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। সমালোচকদের দাবি, এই আইনের পরিধি অনেক ব্যাপক এবং এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রে অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। তবে গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাদেরও সত্য উদঘাটন করতে হবে এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

সংবাদকর্মীরা আইন ভঙ্গ করলে শুধু পেশাগত কারণেই তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতে পারেন না। কোনও সংবাদমাধ্যম জেনে-শুনে ভুল সংবাদ পরিবেশন করলে এজন্য তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে। এটা কি নিখুঁত? অবশ্যই না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটির বিবর্তন ঘটবে। তবে বাংলাদেশ ডিজিটাল আইন ও নিরাপত্তার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।