পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি চালানোর মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২৪ বছর আগে ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা ছিল সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট ও সাজানো। পরিকল্পিতভাবে নিজ দলীয় লোকদের দিয়েই ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা সর্বজনবিদিত। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের জুড়ি মেলা ভার। দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই রায় ঘোষণায় প্রমাণিত হয় যে, সরকারের ক্রমপ্রসারমান ফাঁসির দড়ি এখন বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দল, মত নিশ্চিহ্ন করণে নাৎসিবাদী আয়োজনের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ আজকে সরকারের নির্দেশে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রায়। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত জুলুমের পরও বিএনপিকে নিস্তেজ তো করা যায়ইনি বরং বিপুল জনসমর্থন বৃদ্ধির কারণে সরকারের হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়েছে। কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেয়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কায়দায় দুনিয়া থেকে নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘২৪ বছর আগের ট্রেনে গুলি-বোমা হামলার সাজানো ঘটনায় আজকে আদালত কর্তৃক রায়ের মাধ্যমে একটি বিষয় সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ভোগ-লালসায় অস্থির সরকার তাদের গদি টিকিয়ে রাখতে নানা ধরণের সর্বনাশা নীলনকশা প্রণয়ন করে রেখেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রুপের প্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজকে পাবনার আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রুপের আরও একটি নতুন চেহারা দেখা গেল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশব্যাপী আদিম সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন ও তাদের আগুনে নিক্ষেপ, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা, কিশোরীকে নির্যাতনের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দৃষ্টান্ত শুধু এই সরকারের আমলে সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং সরকারি দলের লোকদের দ্বারাই এসব রক্তাক্ত অনাচার দেশব্যাপী সংঘটিত হচ্ছে। দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ন, লুণ্ঠন, দখল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এগুলোকে আড়াল করতেই ২৪ বছরের পুরনো একটি সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে এই নির্দয় রায় দেয়া হয়েছে। সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতার অংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর পর এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদুরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। অবিলম্বে এই ফরমায়েশি রায় প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’