বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন , বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে চিরতরে নির্বাসিত করবার আয়োজন সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ ।
আজ সোমবার বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন ।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য একের পর এক গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে, বিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে চিরতরে নির্বাসিত করবার আয়োজন সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীন দল ।
ঈশ্বরদীর ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন , ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সকল কর্মকর্তাকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বৎসর পর অভিযোগ পত্র দিয়ে ২৫ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করেছে যে, এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন , বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। খায়রুল হকের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার পুন:প্রবর্তন-একে একে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধানগুলোকে বাদ দিয়ে সংশোধনী এনে একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মারাত্মক প্রক্রিয়া তারা সম্পন্ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি বিচার ব্যবস্থাকে আজ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। ফলে জনগণের যে নূন্যতম আস্থা সেই বিচার বিভাগের নিকট মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিচার ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন , বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অতি সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতার ট্রেনের ওপর হামলা সংক্রান্ত মামলায় নিম্ন আদালতে যে রায় দেয়া হয়েছে তা বিচার ব্যবস্থায় একই চিত্র তুলে ধরেছে। এই মামলার রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তি প্রদানের আদেশ সমগ্র জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা যেকোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আমরা সবসময়ই সন্ত্রাসের ঘটনায় নিন্দা করেছি, প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন , এস কে সিনহা সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত রায়ে পরিষ্কারভাবে এই কথা বলেছেন যে, বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের শিকার হয়েছে এবং জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিম্ন আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ন্যায় বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি। বিচারপতি সিনহাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ-দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবদীন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবদিন মেজবা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।