গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, “ভবিষ্যতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজউকসহ অন্যান্য দপ্তরে আইনগত প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত সফট্ওয়্যার ব্যবহার করা হবে। আইনসঙ্গত কাজ করাই আইনের শাসন। সে আঙ্গিকে অন্যভাবে সংগৃহীত সফট্ওয়্যার ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়। বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পাইরেসী করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধে সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা হতে পারে। তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত সাইবার অপরাধও এর অন্তর্ভূক্ত। আমরা এখন আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় আইনানুগ উপায়ে স্থাপত্য অধিদপ্তরে সফট্ওয়্যার এনেছি। এটা অত্যন্ত ভালো একটা দিক”।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইটেক আনলিমিটেডের উদ্যোগে স্থাপত্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘অ্যাডভান্সড ট্রেনিং অন লাইসেন্সড অটোক্যাড’ বিষয়ক প্রশিক্ষণের সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আইটেক আনলিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম এইচ শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির।
মন্ত্রী বলেন, “প্রযুক্তি নির্ভরতা বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও বিশ্বমানের একটি রাষ্ট্রের জায়গায় নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুধু স্বপ্ন দেখেন না, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। বাংলাদেশে ডিজিটাল রাষ্ট্রব্যবস্থা আজ সরকারি, বেসরকারি ও সাধারণ নাগরিকের কর্মকান্ডে সর্বত্র পৌঁছে গেছে”।
স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থপতিদের উদ্দেশে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, “স্থাপত্য অধিদপ্তর স্বল্প জনবল নিয়ে সারা বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিদের বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্ব পালনে বড় কোন অভিযোগ নেই। এটি প্রতিষ্ঠানটিকে একটি স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে, বিশেষায়িত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অধিদপ্তরের স্থপতিদের এ জায়গা ধারণ করতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে এবং চর্চা করতে হবে যাতে আরো বেশি উৎকর্ষ সাধন করা যায়। সৃষ্টির ভেতর থেকে স্থপতিদের টিকে থাকতে হবে। রক্ত মাংসের দেহ নশ্বর, কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। অবিনশ্বর কীর্তির ভেতরে টিকে থাকার জন্য আমি চাই স্থপতিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক”।
স্থপতিদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, “সৃজনশীলতা হচ্ছে মানুষের সুকুমার বৃত্তি বিকাশের জায়গা। নান্দনিকতা ও শৈলী বিকাশের একটা ক্ষেত্র আপনাদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে রয়েছে। আপনাদের মানসিকতাকে আরো ইতিবাচক করে তুলতে হবে, রূদ্ধতা ও সীমাবদ্ধতার জায়গায় থাকা যাবে না। মনে রাখবেন সৃষ্টির ভেতরে যে আনন্দ আছে অনুকরণের ভেতরে সে আনন্দ নেই। নিজের কীর্তিকে সৃষ্টি করার মধ্য থেকে জীবন উল্লাসে মেতে উঠতে হবে”।
মন্ত্রী অরো বলেন, “নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা করে অনেক কিছু সৃষ্টি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের কর্মস্পৃহা, অদম্য গতি, আন্তরিকতা আর প্রচেষ্টা দিয়ে শৃঙ্খলিত একটি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। স্থপতিদের কাছে আহ্বান থাকবে, সৃষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করুন, নিজেকে নিবেদন করুন। তাহলে আপনাদের আত্মার ক্ষুধা নিবারণ হবে”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব বলেন, “স্থাপত্য অধিদপ্তরের কাজের সক্ষমতা পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অধিদপ্তর নানন্দিক সকল সরকারি স্থাপনার রূপকার। এ অধিদপ্তরকে আরো যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে জন্য পাইরেটেড সফট্ওয়্যারের পরিবর্তে অথরাইজড সফট্ওয়্যার ব্যবহারের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে”।
সভাপতির বক্তব্যে আইটেক আনলিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “আমাদেরকে পাইরেসির বিরুদ্ধে না বলতে হবে। আইনসম্মত থাকতে হবে, আইনানুগ হতে হবে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অনুমতিপ্রাপ্ত সফট্ওয়্যার ব্যবহার করতে হবে”।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাহাদাত হোসেন, স্থাপত্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের স্থপতিবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৮ (আঠারো) জন স্থপতিকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।