বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
‘রোহিঙ্গা সমস্যা জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি’- জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নিজেদের অনতিক্রম্য দুর্বলতা ও ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতেই প্রধানমন্ত্রী আজগুবি কথা বলছেন। উন্মাদ অভিগ্রস্ত না হলে এধরণের কথা বলা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী, দেশের জনগণ সাক্ষী- মিয়ানমার বারবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ১৯৭৮ সালে সেটি শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ’৯২ সালেও রোহিঙ্গা সংকট কঠোর ও সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের যারা খবর রাখেন তারা জানেন।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা এবারো বলেছি, রোহিঙ্গা সংকটকে দলীয়ভাবে দেখার বিষয় নয়, এটা একটা জাতীয় সংকট। এই সংকট বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। ফলে জাতীয় সংলাপ ডাকুন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংলাপে বসুন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বেগম জিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে এখন সমস্যাটিকে উপক্রান্ত অবস্থায় সমাধান না করে লেজে গোবরে পাকিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকারপ্রধান নিজের ইমেজ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর মানবদুর্যোগের সৃষ্টি করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন নৈতিকভাবে দুর্বল এই সরকারের মনোবল এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা কোনও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই চালাতে পারছেন না। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের ব্যর্থতায় প্রমাণিত হয়েছে- এই সরকার বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে অন্যের সফলতা নিয়ে অবান্তর কথা বলছেন।’
সুচিকৎসার অভাবে ৭৫ বছর বয়স্ক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন আশংকাজনকভাবে অবনতি হচ্ছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘ উদ্বেগের সঙ্গে জানাতে চাই, কারাগারে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অপকৌশল প্রয়োগ করছে সরকার। বিনা চিকিৎসায় তাঁকে কারাগারে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার চক্রান্ত চলছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ৬৪৫ দিন যাবত বিনা অপরাধে কারাবন্দি খালেদা জিয়া যে গুরুতর অসুস্থ এটা দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন। অথচ সবকিছু জেনেও শুধুমাত্র রুদ্ধকপাট মুক্তিহীন খালেদা জিয়াকে রোগে-শোকে কষ্ট দেয়ার জন্যই তাঁর চিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে। সুচিকৎসার অভাবে ৭৫ বছর বয়স্ক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন আশংকাজনকভাবে অবনতি ঘটছে।’
পিজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সরকারের শেখানো বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিলেও সুচিকিৎসার কোনও পদক্ষেপই নেয়নি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে কোনও চিকিৎসক বেগম জিয়াকে দেখতে যাননি। তাঁর হাতে যে ব্যথা ছিল তা পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। নার্সরা তাঁর হাতে-পায়ে হাত দিতে পারছেন না, হাত দিলেই তিনি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। তার ডান পায়ের গোড়ালিতে একটা ফোড়ার কারণে সেই যন্ত্রণা আরও তীব্রতর হয়েছে। অথচ সরকারি চিকৎসকরা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করছেন না। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। দেশবাসী তাঁর অসুস্থতা নিয়ে উৎকণ্ঠায় প্রহর গুণলেও স্বাস্থ্যের সঠিক অবস্থা জনগণের সামনে প্রকাশ করছে না সরকার।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রিউমেটোয়েড আর্থাইটিসের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এখনও কোনও মতামত দিচ্ছেন না। অথচ ইতোমধ্যে রিউমেটোয়েড আর্থাইটিসের তিনজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে বোর্ডের যে রিপোর্ট সেটিও প্রকাশ করা হচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান তার বোর্ডের অপর তিনজন সদস্যকে নিয়ে অদ্যাবধি কোনও বোর্ড মিটিং করেননি। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অন্যান্য সদস্যদেরকে জানাচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল বুধবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ভাই-বোনরা সাক্ষাত করে তার গুরুতর অসুস্থতায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তিনি হাইলি এক্টিভ ডিফরমিং, রিউমেটোয়েড আর্থাইটিস, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রোগের প্রয়োজনীয় যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যা না হওয়ার কারণে উনার হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। উঠতে-বসতে পারছেন না। জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে, যা অচিরেই স্থায়ী রুপ ধারণ করতে পারে। হাত, পায়ের আঙুল বেঁকে যাচ্ছে। নিজ হাতে কিছু খেতেও পারছেন না।’
সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা খালেদা জিয়ার গুরুত্বর রোগ নিয়ে উপহাস করছেন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘জনগণের সেন্টিমেন্ট তোয়াক্কা করে না বলেই সরকার দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রীর জীবনকে নিঃশেষ করে দেয়ার সকল আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে। একদলীয় পলিটিক্যাল মনোপলি বজায় রাখার জন্যই বেগম জিয়ার জীবন বিপন্নের আয়োজনে সরকারের আগ্রাসী অসহিষ্ণুতা প্রবল হয়ে উঠেছে। সেজন্য তাঁর চিকিৎসার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।