তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোথাও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নেই। চিঠির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভারত সফরে গিয়েছিলেন, সেখানে যে চুক্তি হয়েছে তা জনগণ জানে না। তাই প্রশ্ন জাগে, বিএনপি নেতারা কি আদৌ খালেদা জিয়ার মুক্তি চান?’
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে রবিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া সেটি গ্রহণ করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কোনও চুক্তি করেননি। যেগুলো চুক্তি হয়েছে তা হলো−সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই। এর বাইরে, আমরা ভারতের কাছ থেকে লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় একটা ঋণ সুবিধা পাই। সেটি দেয় ভারতের এক্সিম ব্যাংক। সেই এক্সিম ব্যাংক ঢাকায় একটি অফিস করতে চায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বিএনপির চিঠি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই চিঠির মাধ্যমে বিএনপি নেতারা প্রমাণ করেছে তারা এমওইউ এবং চুক্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝে না। এটি দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে সফরের যাবতীয় বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিকে জানান, সংসদে উপস্থাপন করেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাদের প্রশ্নের জবাবে ব্যাখ্যা দেন। এবার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী এর সবকিছু করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপির এমপিদের প্রশ্নের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএনপির এই চিঠি অন্তঃসারশূন্য।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি সবকিছুই জানে। তবে এ চিঠি দেওয়ার বিষয়টি একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই না। এই চিঠি দ্বারা বিএনপি আবারও প্রমাণ করেছে তারা ভারতবিরোধী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ফেনী নদীর পানি ভারতে দেওয়ার বিষয়ে একটি এমওইউ সই হয়েছে। ফেনী নদীতে প্রবাহিত পানির চারশ’ ভাগের একভাগ পরিমাণ পানি খাবার বাবদ নেবে ভারত। এটি আগেও নিতো। এবার আলোচনার মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তি হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এলপিজি গ্যাস উৎপাদন করে না, আমদানি করে। আমদানি করা এলপিজি গ্যাসের অতিরিক্ত আমরা ভারতে রফতানি করবো, সেই চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে রফতানির পণ্যের ঝুড়িতে আরেকটি পণ্য যুক্ত হলো।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায় ভারত। আমরা তাদের এ দুটি বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছি। এ ব্যাপারে এসওপি সই হয়েছে। তারা এ দুটি বন্দর ব্যবহার করে আমাদের রেভিনিউ দেবে। এতে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। এই এসওপি সই অর্থনীতির জন্য সহায়ক। নেদারল্যান্ডস এবং সিঙ্গাপুর নিজেদের বন্দর অন্যদের ব্যবহার করতে দিয়ে তারা সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের কোস্ট গার্ডের রাডার সিস্টেম সমৃদ্ধ নয়। তাই ভারতের আর্থিক সহায়তায় বঙ্গোপসাগরে কোস্ট গার্ডের জন্য রাডার যন্ত্র স্থাপন করবো। আমরা নিজেরাই কিনবো, স্থাপন করবো, ব্যবহার করবো। আর ভারত শুধু অর্থ দেবে। সেই চুক্তি হয়েছে।’
বিএনপির বক্তব্য মূর্খ বলে আখ্যায়িত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি না, বিএনপি নেতারা মূর্খ, এগুলো বোঝে না। কিন্তু তাদের বক্তব্যগুলো মূর্খের মতো।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার শাসনামলে দুই বার ভারত সফর করেছিলেন। তখন সাতটি চুক্তি হয়েছিল। তা কি ফিরে এসে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছিলেন? সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন? সংসদকে জানিয়েছিলেন? খালেদা জিয়া তো সংসদেই যেতেন না। পাঁচ বছরে সাতদিন সংসদে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার এই ভারত সফর দেশ ও মানুষের স্বার্থে। ভারতের সঙ্গে মামলা করে শেখ হাসিনা সরকার সমুদ্র জিতেছে। ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দীর্ঘদিনের সিটমহল সমস্যার সমাধানে করেছে এবং তা ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী করেছে। যে চুক্তিকে বিএনপি গোলামি চুক্তি বলতো।’