বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘আমার চোখের সামনে এখনও ১৯৭৪ (দুর্ভিক্ষের বছর) সাল ভাসছে। ৭৪-এ বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা ও অস্থিরতা নেমে এসেছিল, আজকে আমার কাছে মনে হয় দেশে আবারও দুর্ভিক্ষের সেই একই পদধ্বনি আমি শুনতে পাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘২০১৯ সালটা বর্তমান সরকারের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটি বছর। সারা জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক বছর। একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে। নুসরাত হত্যা থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি, সেখান থেকে শুরু করে যুবলীগের ক্যাসিনো-কাণ্ড, তারপরে পেঁয়াজ ও লবণের সমস্যা।’
তিনি বলেন, ‘যে সরকার সামান্য নিত্যপণ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার আর থাকে না। আর এখন এধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। চালের দাম একদিনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে! এসব কারণে আমি আবারও দেশে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।’
সরকারের উদ্দেশ্যে মওদুদ আরও বলেন, ‘সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। বলতে চাই, এখনই সময়- আপনারা পদত্যাগ করুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যাতে করে এদেশের মানুষ নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তারা তাদের পছন্দ মতো প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এটাই এখন একমাত্র সময়ের দাবি। আর এটা যদি আপনারা নিজে থেকে না করেন তাহলে দেশের মানুষ তা আদায় করে নেবে।’
বর্তমান সরকার দেশে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, ‘বিরোধী দলকে দমন করতে গিয়ে সরকার সব মানুষের সুখ-শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। এজন্য মানুষের মধ্যে আজ আর শান্তি নাই। একটার পর একটা সংকট দেখা দিচ্ছে দেশে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই সরকার দেশে এই নৈরাজ্যেকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে।’
রাষ্ট্র পরিচালনায় ভোটারবিহীন এই সরকার সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন মওদুদ আহমদ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামিনে যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয় তাহলে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করা। আজ দেশের মানুষ তা করতে প্রস্তুত ও তৈরি আছে। মানুষ আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যে আমরা কী ধরনের কর্মসূচি দেই। সেই কর্মসূচিতে মানুষ অংশগ্রহণ করে বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু নয়, গণতন্ত্রও ফিরিয়ে আনবে।’
তারেক রহমানের জন্মদিন প্রসঙ্গে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘তিনি (তারেক রহমান) আগামী দিনের রাষ্ট্র নায়কের ভূমিকা পালন করে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এই আশা এবং প্রত্যাশা আমাদের সবার। আর তার মধ্যে যেসব গুণ দেখতে পাই, এর মধ্যে সহনশীলতা অন্যতম।’
দোয়া মাহফিলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন ওলামা দলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম।