বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশের কোনো লোক জানতে পারল না, কোনো পদক্ষেপ নিলো না, কেন ওই লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে? সে উত্তর এখনো আমি পাইনি। এত বড় সংগঠন, এত নেতা কোথায় ছিল? মাঝে মাঝে আমার এটা জানতে ইচ্ছে করে, কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে এলো না কেন?’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তো শেখ মুজিবের সঙ্গে ছিল। এই ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে হয়েছে জাতিকে। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এ দেশে বারবার ক্যু হয়েছে। ১৮-১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। অত্যাচার নির্যাতন চলেছে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর। সে সময় যদি কেউ সাহস করে দাঁড়াত তাহলে এত অত্যাচার হতো না, বারবার ক্যু হতো না।’
স্বাধীনতার জন্য মুক্তি সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজ-উদদৌলাকে কূটচালে লর্ড ক্লাইভ পরাজিত করে এবং বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। ঠিক সেই সূর্য উদিত করার জন্যই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সংগ্রাম শুরু করলেও তিনি জানতেন বাঙালি জাতি শোষিত-বঞ্চিত, অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। যাদের নিজস্ব বাসস্থান নেই, খাবারের নিরাপত্তা নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই। সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত। তার চিন্তা ছিল এই জাতির ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করবেন। জাতিকে গড়ে তুলবেন। এমন একটি দেশ গড়ে তুলবেন যে দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করতে গিয়ে বারবার জেল, জুলুম, অত্যাচারিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তিনি সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বঞ্চনার হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তি দেওয়া, বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র ভূমি গড়ে তোলা, বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে মর্যাদা দেওয়া, এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাঙালি জাতি অতি অল্প সময়ে ছয় দফাকে তাদের মুক্তির সনদ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল। ৭০-এর নির্বাচন অনেক দল বর্জন করলেও বঙ্গবন্ধু তা করেননি। তার লক্ষ্য ছিল এই নির্বাচনের মাধ্যমে ৬ দফার প্রতি জনগণের ম্যানডেট নেওয়া। জনগণের মনোভাব জানা। নির্বাচনে মানুষ ৬ দফার পক্ষে রায় দিয়েছিল।’