কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর রীতিমত চিকিৎসা সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে ৬৮৫ দিন ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার সুচিকিৎসা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানালেও তাতে কর্ণপাত করছেন না প্রধানমন্ত্রী। বেগম জিয়ার ন্যায্য জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে। এখন তার ওপর চলছে রীতিমত চিকিৎসা সন্ত্রাস।’
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়া কেমন আছেন? তাকে নিয়ে কি করা হচ্ছে কিছুই জানতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আশংকায় আছি দেশনেত্রীকে নিয়ে। তার অসুস্থতা পূর্বের চেয়ে ভিন্ন ও গভীর। আমরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছি। আসলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়মিত ওষুধ সেবনে কোন কারসাজি করা হচ্ছে কি না? সরকার প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপে পিজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মনগড়া স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে জামিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আমরা আশংকা করছি দেশনেত্রীকে প্রাণনাশ করার ভয়ংকর কোন নীলনক্সা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে দিল্লীর সম্পর্ক শীতল এবং টানাপোড়েন চলছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্বস্ত প্রতিবেশী দেশের সরকারের সাথে সম্ভবত কোন কারণে অম্লমধুর বিরহ পর্ব চলছে শেখ হাসিনার সরকারের। এতে প্রতিবেশীর আস্থাভাজন রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকা এই অবৈধ সরকারের মাথা বিগড়ে গিয়েছে। ফলে মুরুব্বীদের তুষ্ট করে শীতল সম্পর্ক উষ্ণ করতে আবোল-তাবল প্রলাপ বকা শুরু করেছেন এই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা।’
তিনি বলেন, “নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণার জেরে গোটা ভারত যখন বিক্ষোভে উত্তাল তখন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ন্যাক্কারজনকভাবে সমর্থন দিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে তার বক্তব্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের সময় এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব তাদের প্রতিবেশী মুরুব্বীদের সামাল দিতে দায় এড়ানোর জন্য দোষ চাপাচ্ছেন বিএনপির ওপর।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন ২০০১ সাল থেকে যে সংখ্যালঘু নির্যাতন এদেশে হয়েছে, এটা কেবলমাত্র একাত্তরের বর্বরতার সাথে তুলনা হয়। বিএনপি যতই সত্যকে চাপা দিতে চেষ্টা করুক না কেন, তখন কিভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। ওই অবস্থায় দেশ থেকে পালানোই ছিল স্বাভাবিক।’ ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য মীরজাফরের সঙ্গে তুলনীয়। মিরজাফররাই ভেতর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিদেশি শক্তিকে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সহযোগিতা করেছিল।
রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবরাও নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিদেশি মুরুব্বীদের প্রতিভু হয়ে তাদের কুর্ণিশ করছে। একারণে মুরুব্বীদের প্রীতিধন্য হওয়ার জন্য নিজ দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা কলঙ্ক রটনা করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
তিনি বলেন, অমিত শাহ বিএনপিকে নিয়ে লোকসভায় যে মনগড়া, ভ্রান্ত এবং কাল্পনিক তথ্যের অবতারণা করেছিলেন সেটিকেই বৈধতা দিলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। ওবায়দুল কাদের সুর মিলিয়েছেন অমিত শাহ’র সাথে। যেমন মিরজাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভরা সুর মিলিয়েছিলেন লর্ড ক্লাইভদের সাথে। ভারতীয় আইনসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করার সময় অমিত শাহ পার্লামেন্টে তার বক্তব্যের একপর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের নাম উচ্চারণ করে শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে সরাসরি অভিযুক্ত করে অসত্য বক্তব্য দেন।
অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে সেখানে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পালিয়ে এসেছে।’ এ ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বাংলাদেশের জনগণ ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হুমকি- যোগ করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘আমরা আবারও বলছি, ২০০১ সাল কেনো, বিএনপির কোন শাসন আমলেই দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। আবহমানকাল ধরে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন ছিল। এমনকি বাবরী মসজিদ সংকট এবং গুজরাট-দাঙ্গার সময় এবং খালেদা জিয়ার আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বাঁধনে কোন চিড় ধরেনি। এক কথায় বলতে গেলে বিএনপির সরকারের সময় সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।