ড. কামাল হোসেন সবকিছুতে সংবিধান নিয়ে আসেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক একথা বলেন।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তার জামিন না হওয়াটা সংবিধান লঙ্ঘনের মতো কাজ- তার এই বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শুধু ড. কামাল হোসেন নন, গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ড. কামাল হোসেন অবশ্য সবকিছুতে সংবিধান নিয়ে আসেন। জামিন না হলে সংবিধান লঙ্ঘন, তিনি আরও কিসে কিসে সংবিধান লঙ্ঘন ভবিষ্যতে বলতে পারেন আমি জানি না। তবে উনি সংবিধানকে নিয়ে আসেন।’
তিনি বলেন, ‘জামিন হওয়া না হওয়া এটি সাংবিধানিক বিষয় নয়, এটি হচ্ছে আদালতের বিচার্য বিষয়। খালেদা জিয়ার জামিন দেয়ার এখতিয়ার তো সরকারের নেই, জামিন দেয়ার এখতিয়ার আদালতের। ড. কামাল হোসেন কী আদালতকে অভিযুক্ত করেছেন সেটি আমার প্রশ্ন?’
‘দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে অপরাজনীতি আমরা সবসময় লক্ষ্য করছি। আমি একটু আগেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিএনপি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যে অভিযোগগুলো উপস্থাপন করেছে, সেগুলো আসলে কতটুকু কী? তারা আমাকে যেটি বলেছেন- তারা (বিএনপি) যেভাবে বেগম জিয়া অসুস্থ পত্রপত্রিকা বা গণমাধ্যমের সামনে যেভাবে উপস্থাপন করছেন বিষয়টি ঠিক সেই রকম নয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক মানুষ, সেই কারণে তার কিছু স্বাভাবিক বয়সগত সমস্যা আছে। এর বাইরেও তার যে আর্থাইটিসের সমস্যা এগুলো বহু বছরের পুরনো সমস্যা। দুই দশকের বেশি সময়ের পুরনো সমস্যা। সেই সমস্যাগুলো বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে, সেটি তার ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা প্রতিদিন তার স্বাস্থ্য চেকআপ করছেন, এমনকি আজকেও তারা করবেন। তারা জানিয়েছেন তারা সর্বোচ্চ যত্ন ও মেধা দিয়ে যাতে তাকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায় সেই চেষ্টাই তারা করছেন।’
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন বিএনপি নেতারা- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তো সবসময় প্রযুক্তির বিরোধিতা করে। আপনারা জানেন ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া যখন সরকার গঠন করেছেন, তখন বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের, বাংলাদেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে সেই কথা বলে তিনি (খালেদা জিয়া) সাবমেরিন স্থাপন করার অনুমতি দেননি। যেটি পরবর্তী সময়ে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে আমাদের স্থাপন করতে হয়েছে।’
‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ইভিএমে ভোট হচ্ছে, সেই নিয়ে মোটামুটি সব পক্ষ সন্তুষ্ট। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইভিএমে ভোট হয় সেখানে ইভিএমের বিরোধিতা তারা কেন করছেন, এটির কোন সদুত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না। একটি সদুত্তর পাই আমি সেটি হচ্ছে তারা যে অতীত থেকে প্রযুক্তির বিরোধিতা করে আসছে, সেটির ধারাবাহিকতা হচ্ছে ইভিএমের ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করা। ব্যালটে ভোট হলেও তারা নানা অভিযোগ উপস্থাপন করেন। মূল কথা হচ্ছে, তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তারা বুঝতে পেরেছে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই।’
পরাজয়ে আশঙ্কা থেকে বিএনপি নানা অভিযোগের বাক্স এখন থেকেই খুলে বসেছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাতে তারা নির্বাচনের আগে- নাচতে না জানলে উঠান যেমন বাঁকা বলা হয়, ঠিক সেই ধরনের একটি বক্তব্য তারা হাজির করতে পারেন, সেজন্যই তারা এই অভিযোগগুলো উপস্থাপন করছেন।’
সরকারের মন্ত্রী আবার দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই ক্ষেত্রে সমন্বয় করতে গিয়ে কোন চাপ অনুভব করেন কি না- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যে সরকারে আছি সেটা হচ্ছে দলের সরকার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকার। সরকার ও দলের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন সেই কাজটি আমি দুই দায়িত্বে থাকার কারণে আমার পক্ষে করা সহজ হচ্ছে।’