ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘কোথাও কোনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারী) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
মোশাররফ বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের ইশরাক হোসেনকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করে চতুর্থ দিনের মতো প্রচারণা শুরু করেছি। এ নির্বাচনে আমরা প্রথম থেকে প্রত্যাশা করেছিলাম, যদি জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে হয় তাহলে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। আচরণবিধিতে বলা আছে, কোনও প্রার্থীর পক্ষে রঙিন পোস্টার লাগানো যাবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, সরকার দলীয় প্রার্থীরা রঙিন পোস্টার ব্যবহার করছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।’
ঢাকাবাসী যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে আহ্বান জানান সাবেক এই মন্ত্রী।
মোশাররফ আরও বলেন, ‘জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে চায়। আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএমে ভোট চাই না। ইভিএম বাতিল করে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়ার ব্যাপারে আবার আমরা নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন,
দল সমর্থিত প্রার্থীদের ওপর প্রতিপক্ষের হামলা-হুমকি প্রসঙ্গে মোশাররফ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির প্রচারাভিযানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করছেন। প্রার্থীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীর বাড়িতে আক্রমণ করা হচ্ছে, প্রচারের মাইক ছিনতাই করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু মধ্যমপন্থি গণতান্ত্রিক দল, আমরা জানি- এই ভোট ডাকাতির সরকার ও তাদের পদলেহী নির্বাচন কমিশন কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে না। তবুও আমরা একটা গণতান্ত্রিক এবং মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি বজায় না থাকে তাহলে এ নির্বাচন সফল হবে না। ইসিও জনগণের কাছে পুরোপুরিভাবে আস্থা হারাবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ আছে, জনগণ দেখছে। জনগণ যদি সুষ্ঠুভাবে, নিরপেক্ষভাবে, মুক্ত ভাবে ভোট দিতে পারে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের উভয় মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে, জয়যুক্ত হবে। সরকারের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতনসহ দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেভাবে ঢাকা বিষাক্ত শহরে পরিণত হয়েছে এ থেকে মুক্তির জন্য ঢাকাবাসী ধানের শীষে ভোট দিতে ও বিএনপির কাউন্সিলরদের নির্বাচিত করতে প্রস্তুত আছে। তাই জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
মোশাররফ আরও বলেন, ‘এ নির্বাচনকে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। আমরা ঢাকাবাসীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, জানি আপনারা এই সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ। আপনারা পরিবর্তন চান। পরিবর্তনের স্বার্থে সব বাধা ও ষড়যন্ত্র ভেঙে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে এসে ভোট দেবেন। জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে ভোট দেবেন। এই সরকারের হাত থেকে এদেশের মানুষকে ও ঢাকাবাসীকে রক্ষা করার জন্য আমাদের দুই মেয়র প্রার্থীকে ধানের শীষে ভোট দেবেন এবং আমাদের যারা সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের পক্ষে ভোট দেবেন। ঢাকাবাসীর কাছে এ আমার আহ্বান।’
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. শাহজাহান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, যুগ্ম সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কাবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।