ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলেছে, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বরুপ উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে যে অবস্থা বিরাজমান ছিল অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নেতাকর্মীদের হয়রানি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের ঘুম কেড়ে নেয়ার নীতি এবারো তারা অব্যাহত রেখেছে।’
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গত রবিবার গোপীবাগে ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রচারণায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলার ঘটনার পর উল্টো বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দায়ের করার পর এ পর্যন্ত ১০-১২ জনকে গ্রেফতার করে এখন রিমান্ডের নামে চলছে অকথ্য নির্যাতন। ৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এই অজ্ঞাতনামা আসামি করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে— গণগ্রেফতার চালিয়ে এলাকাকে বিএনপি নেতাকর্মী ও ভোটারশূন্য করা। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিনের ক্যাম্প থেকে হামলা করা হয়, দোতলা থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ১২ জনের মতো বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত করা হয়। আহতদের মধ্যে তিনজন সাংবাদিকও রয়েছেন। অথচ এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান। উল্টো ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান আজিজ নিজে বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তিনি যেন ঐ থানায় যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অনুকুলে রাখার জন্য ওয়ারী থানার ওসি দায়িত্ব পালন করছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী লীগকে জেতাতে ততটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বরাবর নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয় এবং বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া হয়। এবারে ঢাকা সিটি নির্বাচনে সেই উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সুতরাং সন্ত্রাসের বাতাবরণে একদলীয় ভোট অনুষ্ঠিত করার জন্য বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান ও তার প্রীতিধন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রতিদিনই নানা প্রকাশের আক্ষেপে নব নব রুপে স্ফুরিত হচ্ছেন। সুশাসন নয়, আওয়ামী লীগ যে সন্ত্রাস বিতরণের কেন্দ্র সেটিরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন আমাকে ফোন করে জানালেন যে, ধানমন্ডিতে বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত প্রচারণা কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। সেখানকার ওসি ও ডিসি দাঁড়িয়ে থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার যে ওয়ার্ডে বাস করেন সেখানে একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প পোড়ানো এবং টিভি ক্যামেরাম্যানকে চাপাতির কোপ দিয়ে আহত করা হয়েছে। ওয়ারী থানা বিএনপির সভাপতি হাজী লিয়াকত আলীর ওপর সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে।’
‘একদিন আগে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন- নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরেই কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই ভোটে নির্বাচন কমিশনের যেভাবে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। সিটি নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে তিনটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়, তার কোনোটিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি, অনিয়ম বা প্রার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি। আজ নির্বাচন কমিশনে যে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতেও ঢাকা সিটি করপোরেশন সম্পর্কে কোনো বিষয় আলোচ্য সূচিতে নেই। নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষ থেকে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে যেসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বা অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে কমিশনে কোনও প্রকার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি (মাহবুব) বলেন, ‘এসব অভিযোগের পেছনে যে অসন্তোষ, তা বিস্ফোরিত হলে সিটি করেপারেশন কর্পোরেশন নির্বাচন যথোপযুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হবে না, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। কমিশনসভায় তার বক্তব্য প্রদানের স্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘সিইসির নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার ও ইসির কর্মকর্তারা আগামী ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে রেখেছে। আর সেজন্যই সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা কমিশন সভায় স্থান পায় না। আজ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে যতো অভিযোগ কমিশনে করা হয়েছে সবগুলোই অপ্রয়োজনীয় কাগজের ঝুঁড়িতে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কারণ এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার স্তাবক ও সেবক। সুতরাং তার কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় রয়েছে। তিনি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোট মহাকালের গুপ্ত গহব্বরে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দু’জন ভিন্ন ব্যক্তি হলেও তাদের কণ্ঠস্বর একটাই। তারা নির্বাচন নিয়ে একই সঙ্গীত গাইছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার গণধিকৃত, তাই দেশের ভোটারদের সাথে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছেন-ভোট সন্ত্রাস ও ভোট লুটের মাধ্যমে। তবে ক্ষুব্ধ জনগণ এখন আর বসে থাকবে না। তারা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে দু:শাসনের জবাব দিবে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ।