তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির এ দেশে রাজনীতি করা সমীচীন নয়।
তিনি বলেন, দেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকবে, আবার বিরোধী দলও হবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। সরকারি দলও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিরোধী দলও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, সেটিই হওয়া বাঞ্চণীয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহরে এলজিইডি ভবনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক এমপি ও রাষ্ট্রদুত নুরুল আলম চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংরক্ষিত আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মঈন উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মরহুমের সন্তান আসিফুল সোহাগ সাকিব।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একটি দেশে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি থাকবে, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি রাজনীতি করবে, এটা হওয়া উচিত নয়। যারা দেশটাই চাইনি, দেশের পতাকাটাই চাইনি, যারা দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তারা আস্ফালন করবে, তাদের রাজনীতি থাকবে, সেটা কোন দেশে হওয়া সমীচীন নয়।
রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে পুরোপুরি নেই উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতিতে বণিকায়ন ও দূর্বৃত্তায়ন হয়েছে। রাজনীতিতে প্রচন্ড সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এবং এটির সুচনা করেছিল জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতা দখল করার জন্য রাজনীতিবিদদের কেনাবেচার হাট বসিয়েছিলেন। মওসুমে যেমন খেলোয়াড় বিক্রি হয় ঠিক সেইভাবে অনেক রাজনীতিবিদ বিক্রি হয়েছিল। সেইভাবেই গঠিত হয়েছিল বিএনপি। আজকে যারা বিএনপির বড় বড় নেতা, তারা সবাই খেণোয়াড়দের মতো রাজনীতির হাটে বিক্রি হওয়া রাজনীতিক।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ ইনশাআল্লাহ সব দল করেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রিজভী আহমেদসহ চট্টগ্রামের যারা বিএনপির বড়বড় নেতা তারাও অন্যদল করতেন। আবার কেউ কেউ আওয়ামীলীগেও যোগদান করতে ছেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগদান করতে নাপেরে তারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এরা সবাই রাজনীতির মাঠে বিক্রি হওয়া ও সুবিধাবাদি রাজনীতিবিদ। সুবিধাবাদীদের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক দলের নাম হচ্ছে বিএনপি।
তিনি বলেন, পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকের আলস্য এসেছে। আমাদের মধ্যে আলস্য থাকলে হবে না। দলে অনেক অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। অনুপ্রবেশকারীদেরও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। দলকে পরিশুদ্ধ করা প্রয়োজন। অনুপ্রবেশকারী, সুবিধাবাদীরা যাতে দলকে গিলে ফেলতে না পারে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীমুক্ত আওয়ামী লীগ গঠন করতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেই অবক্ষয়ের ধারাবাহিকতায়, সব দলকেই কম-বেশী আক্রান্ত করেছে। দেশসেবার জন্য, মানবসেবার জন্য, সমাজসেবার জন্য, সমাজ পরিবর্তনের জন্য, দেশের উন্নতির জন্য রাজনীতি যে একটি ব্রত, এটি অনেক রাজনীতিবিদ ভুলে গেছেন। মানুষও অনেকক্ষেত্রে মনে করে না, রাজনীতি যে একটি ব্রত। দেশ ভাগের আগে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের যদি আমরা দেখি, পড়ি তাহলে কী দেখতে পাই। তখন অনেক রাজনীতিবিদ সংসার করেননি। কারণ সংসার করলে তার যে একাগ্রতা, দেশ মাতৃকার প্রতি তার যে টান, নিষ্ঠা সেটি নষ্ট হতে পারে। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনীতি করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংসার পেতেছিলেন। সংসার কিন্তু তাঁর করা হয়নি। নুরুল আলম চৌধুরী তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনেকে যখন আত্মগোপনে, অনেকে ভয়ে মুখ খুলছে না, অনেকে মোস্তাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তখন পার্লামেন্টে পার্টির সভায় যে কয়জন বিরোধীতা করেছিল মোস্তাকের এই কর্মকাণ্ডের, তাদের মধ্যে নুরুল আলম চৌধুরী একজন। নুরুল আলম চৌধুরী অত্যন্ত তরুণ বয়সে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৭৩ সালে। ১৯৮৬ সালেও তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর তাকে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ করেছিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নুরুল আলম চৌধুরী ছিলেন তেমনই একজন রাজনীতিবিদ, যিনি রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। এবং দল ও নেত্রীর প্রতি তিনি নিষ্ঠাবান ছিলেন। তিনি কখনো দলের বিরুদ্ধে, নেতার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাননি। আমাদের দলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা গেছে, যখনই দল বিপদের মুখে পড়েছে, অনেকেই বোল পাল্টিয়েছে। অনেকে নেতার বিরুদ্ধচারণ করেছে। ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন গ্রেপ্তার হন তখন অনেক নেতা বোল পাল্টিয়েছে। অনেক নেতা ভয়ে মুখ খোলেনি। অনেক নেতা তখন ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মিলিয়েছে। কিন্তু নুরুল আলম চৌধুরী সেই কাজটি করেননি। তাই নুরুল আলম চৌধুরীর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে যে নেতিবাচক রাজনীতি, এটি যদি বাংলাদেশে না থাকতো, এবং সময়ে সময়ে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি এটি যদি না থাকতো, তাহলে আজকে আমরা আরো বহুদুর এগিয়ে যেতে পারতাম। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার আগেই আমরা উন্নত দেশের খাতায় নাম লেখাতে পারতাম। গত ১১ বছর ধরে বিএনপি-জামায়াতের যে অপরাজনীতি, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, সবকিছুতে না বলার যে রাজনীতি, এই রাজনীতি যদি না থাকতো, তাহলে আরো বহুদুর এগিয়ে যেতে পারতাম।