গৎবাঁধা অভিযোগ ছেড়ে বাস্তবতা মেনে নিন: বিএনপি’কে তথ্যমন্ত্রী

বিএনপি’কে গৎবাঁধা অভিযোগ ছেড়ে বাস্তবতা মেনে নেয়ার কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংস্থা ট্রমা লিংক’র ৫ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাতিল করার বিএনপি’র দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি বলবো এই গৎবাঁধা কথাগুলো বাদ দিয়ে বাস্তবকে মেনে নেয়ার জন্য।’ একইসাথে ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতাও নির্বাচন নিয়ে ফতোয়া দেয়া শুরু করেছেন, যা যথার্থ নয়, বলেন তিনি।

‘ইভিএম-এ যেভাবে ভোট হয়েছে, এর চেয়ে স্বচ্ছ ভালো ভোট বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কখনো হয় নাই’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘ইভিএম প্রত্যেক দলের জন্য পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এখানে কারো ফিঙ্গার প্রিন্ট না মিললে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

‘ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতাও নির্বাচন নিয়ে ফতোয়া দেয়া শুরু করেছেন’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নন, আমাদের দেশে বিভিন্ন বিষয়ে কোনো কোনো মৌলনা যেভাবে ফতোয়া দেন, ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতাও নির্বাচন নিয়ে ফতোয়া শুরু করেছেন।’

‘বিএনপি লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করছে’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২৯ শতাংশ আর উত্তরে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সেই ভোটের মধ্যে আমাদের প্রার্থীরা দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ করেছে। এখন এই লজ্জা ঢাকার জন্য তাদের নানা কথা বলতে হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা সেই কথাগুলোই বলছেন।’

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকানোর জন্য বলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেবার যোগ্য মানুষদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়, আর তার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। অর্থাৎ মোট ভোট দেবার যোগ্য মানুষদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে।’

বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার কারাবাসের দু’বছর হওয়ায় তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি আহুত সমাবেশ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দন্ডপ্রাপ্ত আসামী। আদালত ছাড়া তাকে মুক্তি দেয়ার এখতিয়ার সরকারের নাই। তারা বারংবার সরকারের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আইন এবং আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। সমাবেশ তারা অতীতেও করেছে, আমরা দেখেছি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা সমাবেশ করতে গিয়ে হাঙ্গামা করেছে, মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে, গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর করেছে।’

সমাবেশের অনুমতি মিলবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমস্ত বিচার বিশ্লেষণ করে অনুমতি দেবে কি দেবে না সিদ্ধান্ত নেবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে তাদের উদ্দেশ্যটা কি, সমাবেশ করা, না কি সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।’

স্কুলে ট্রাফিক আইন শেখানো প্রয়োজন:
এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি চিকিৎসাদাতা বেসরকারি সংস্থা ট্রমা লিংক’র ৫ম বর্ষপূর্তিতে সংস্থার চেয়ারম্যান মৃদুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শেখানো প্রয়োজন, সেটা সারাজীবন মনে থাকবে।

ড. হাছান আরো বলেন, ‘বিআরটিএ-কে বলবো সারাদেশে আরো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য। বিআরটিএ-সার্টিফাইড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি ড্রাইভিং শিক্ষা দেয়, তাহলে আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত ড্রাইভারের সংখ্যা আরো বাড়বে। অন্তত যে পরিমাণ গাড়ি আছে সেই পরিমাণ ড্রাইভার আমরা পাবো। যে পরিমাণ গাড়ি আছে তার চেয়ে বেশি ড্রাইভার দরকার। কারণ একজন ড্রাইভার প্রতিদিন গাড়ি চালাতে পারে না।’

ট্রমা লিংক’র প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা যেভাবে সেবা দিচ্ছে সটি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী ৩৫ ভাগ মানুষ মারা যায় অতিরিক্ত রক্তক্ষণের কারণে, সঠিক চিকিৎসাটা না পাওয়ার কারণে। তাদের এই উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের ও বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রুপদের যদি এর সাথে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে এই নেটওয়ার্কটা অনেক বাড়বে।’