অমর একুশে গ্রন্থমেলা আওয়ামী মেলায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলছে। মেলাটি আগে ছিল সার্বজনীন, কিন্তু এখন এই বইমেলা আওয়ামী বই মেলায় পরিণত হয়েছে। মেলার বিভিন্ন স্টল আওয়ামীকরণে সজ্জিত করা হয়েছে। মেলায় ঢুকলেই মনে হয়, এটি যেন আওয়ামী লীগের কোনো কাউন্সিল অধিবেশন। একদলীয় দুঃশাসনের দুরন্ত প্রভাব পড়েছে চলমান বই মেলায়।’
দেশে চারদিকে লুটপাটের মহামারী চলছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘সরকারের লোকজন যে যেভাবে পারছে বেপরোয়াভাবে লুটে নিচ্ছে জনগণের অর্থ-সম্পদ। দেশের মানুষ ফৌত হয়ে গেছে। আওয়ামী লুটপাটের বড় খাত কেবল শেয়ার বাজারে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাংকগুলো একটির পর একটি দেউলিয়া করার পর এখন জনগণের পকেট কাটতে সরকার একটির পর একটি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিচ্ছে। ব্যাংকে ব্যাংকে সয়লাব এখন দেশ।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘রোববারও আওয়ামী লীগের এক নেতার নামে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল নামে একটি ব্যাংকের। এই ব্যাংকগুলো করা হচ্ছে জনগণের পকেট কাটার জন্য। একদিকে যেমন ঋণ নিয়ে চলছে সরকার, পাশাপাশি বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত এবং সেক্টর করপোরেশনের উদ্বৃত্ত অর্থ তুলে নিয়ে যাচ্ছে সরকার জোর করে। এর পাশাপাশি শুরু হয়েছে ব্যাংক নিয়ে নতুন খেলা। অর্থ সম্পদ গচ্ছিত রাখার ব্যাংক এখন রীতিমত আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন করে আইন বানানো হচ্ছে-কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে আমানতকারীর যত আমানতই থাকুক না কেনো, মাত্র বিমার ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। রীতিমত রাক্ষসরাজ্যে পরিণত করা হয়েছে দেশকে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি করতে গিয়ে এই নিশিরাতের লুটেরা সরকার যে বিশাল বাজেট তৈরি করেছিল, তার জন্য অর্থের সংস্থান করতে পারছে না। আমদানি-রফতানি মুখ থুবড়ে পড়েছে, রাজস্ব আয় কম হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র থেকে আয় চলে এসেছে নগণ্য পর্যায়ে, ফলে সরকার চলছে ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে। এ বছর বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছরের ছয় মাসের মধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৫১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা থেকে ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার। বাকি ৬ মাসে কী অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। ১০ বছরে ব্যাংকের কাছে সরকারের নিট ঋণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা আর পরিশোধ করবে না সরকার।’
দুদকের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘দুদক নামের দলকানা এক প্রতিষ্ঠান আছে তারা হারিকেন দিয়ে শুধু বিরোধী দলের লোকজনদের খুঁজতে খুঁজতে দিন-রাত পার করে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাই এখন লুটতরাজের একেকজন সর্দারে পরিণত হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলে রেখে সরকারের টপ-টু বটম লুটের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। যেন চারিদিকে শুধু হরিলুটেরই ধুম পড়েছে। বাছাই করা লোকজন দিয়ে খোলা হচ্ছে ব্যাংক। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ী কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই এক ব্যাংকের পরিচালকরা আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন ইচ্ছামতো।’
ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “গতকাল সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন-জনগণের প্রতি আস্থা নেই বিএনপি’র। বিদেশিদের কাছে নালিশ করাই তাদের কাজ। সভা-সমাবেশ করে জনগণের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতে পারে না। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাদের দান-খয়রাতের গণতন্ত্রে জনগণকে কোথায় পাঠিয়েছেন তা কি আপনি জানেন? জনগণের প্রতি যখন এতোই আপানদের আস্থা তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দিয়ে নিশিরাতের নির্বাচন করছেন কেন? আসলে জনগণ বলতে আপনি কি বোঝান তা কেউ বুঝতে পারে না। আপনি হয়তো অন্যদেশের জনগণের কথা বলছেন। তারা হয়তো আপনাদেরকে সমর্থন করে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।