তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আজকের বাস্তবতায় জেলা জজদের ‘আনলিমিটেড’ আর্থিক ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন আর সমাজের দুষ্কৃতিকারীরা যাতে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হতে না পারে, সেজন্য আইনজীবীদের ‘ইথিকস’ মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চট্টগ্রামের প্রায় দুই হাজার আইনজীবীর সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘জেলা জজের আর্থিক ক্ষমতা মাত্র ৫ লক্ষ টাকা আর চট্টগ্রাম শহরের শহরতলীতেও রাস্তার পাশে এক কাঠা জমির দাম ৫০ লক্ষ টাকা। আমাদের গ্রামে এবং উপজেলা শহরে এককাঠা জমির দাম কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকা। আর ডিস্ট্রিক্ট জজের আইনি ক্ষমতা হচ্ছে মাত্র ৫ লক্ষ টাকা।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ক্ষমতা ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন কিন্তু হাইকোর্টের একজন আইনজীবী রিট করে সেটি বন্ধ করে রেখেছেন’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘গুটিকতক আইনজীবী আছেন, যাদের আইন পেশায় কোনো মামলা নাই। তাদের কাজ হচ্ছে কোনো একটি পাবলিক ইস্যুতে রিট করা, এটিই তাদের মূল ব্যবসা। সেই ধরণের একজন আইনজীবী রিট করে এটিকে বন্ধ করে রেখেছেন। সম্প্রতি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। মাননীয় আইনমন্ত্রী এই রিটটি সমাধা করে এটি যাতে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেবার আশ্বাস দেন। তবে আজকের বাস্তবতায় জেলা জজদের ‘আনলিমিটেড’ আর্থিক ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।’
ড. হাছান আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, ‘ইথিকস’ নিয়ে চলা আইনজীবীদের অত্যন্ত প্রয়োজন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা দেয়া, সমাজে দুষ্কৃতিকারীরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হতে না পারে, সেজন্য আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
চট্টগামের জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে তথ্যমন্ত্রী তার পিতা প্রখ্যাত আইনজীবী ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আলহাজ্ব নূরুচ্ছাফা তালুকদারের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তব্যে সমাজ পরিবর্তন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও আইনজীবীদের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
নীতি নিয়ে চলা প্রসঙ্গে স্মরণসভার সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুলের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তার (এডভোকেট ইব্রাহীম) সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তিনি বলেছেন, তিনি ইয়াবার মামলা করেন না, গ্যাংস্টার, এসিড নিক্ষেপ ও মানব পাচার মামলা করেন না। জামিনের জন্য আইনী লড়াইয়ে তার সুনাম আছে। কিন্তু এই চারটা বিষয়ের মামলা তিনি করেন না। যদিও এগুলো করলে তিনি অনেক ফিস পাবেন, তবুও করেন না।’
এসময় চট্টগ্রামসহ দেশের জেলা আইনজীবীদের অন্যতম দাবি, ‘সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা’ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি যে, চট্টগ্রামে এক সময় হাইকোর্টে বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল। আমাদের সংবিধানে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের কথা বলা আছে। কিন্তু ঢাকার আইনজীবীরা এটার বিরোধিতা করেন। সেই কারণে অনেকবার উদ্যোগ নেয়ার পরও এটি সম্ভবপর হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দাবির একমত পোষণ করি। এ নিয়ে আমি আইনমন্ত্রীর সাথেও কথা বলেছি। ক’দিন আগে প্রধান বিচারপতির সাথে আলাপ করেছি। হাইকোর্টের আইনজীবীরা সেটা চান না। তবে আমি মনে করি, সাংবিধানিকভাবে যেটা করার কোনো বাধা নেই, সেবিষয়ে আপনাদের জোরালো দাবি নিশ্চয়ই বাস্তবায়ন হবে।’