সত্যতা যাচাই না করে কোন সংবাদ মাধ্যমে কোনো ধরণের কাল্পনিক তালিকা প্রকাশ করা কোনভাবেই সমীচীন নয় বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাশেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
এসময় সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত ‘পাপিয়া’র সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাল্পনিক তালিকা প্রকাশের অভিযোগে দৈনিক মানবজমিন সম্পাদকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রুজু মামলার বিষয়ে মন্তব্য চাইলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কিছু কাল্পনিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আমি মনে করি, সত্যতা যাচাই না করে এধরণের কাল্পনিক তালিকা প্রকাশ কোনভাবেই সমীচীন নয়। যদি কেউ করে থাকে, সেটি পত্রিকা হোক, অনলাইনে হোক বা অন্যভাবে হোক সেটার দায় তারা এড়াতে পারেননা।’
‘আমি কাগজে দেখেছি, আমাদের একজন সম্মানিত সংসদ সদস্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ সংক্ষুব্ধ হলে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই পারেন। সেটি তার সাংবিধানিক অধিকার। এবং যাচাই বাছাই না করে দায়িত্বশীল পত্রিকা কিম্বা কোন দায়িত্বশীল অনলাইন, কিম্বা দায়িত্বশীল কোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ করা কোনভাবেই দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না। সুতরাং এই দায়িত্বহীন আচরণ যদি কেউ করে থাকেন, দায়িত্বহীনতার দায় তাকে নিতে হবে।’
‘করোনা’ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবকে একটু পড়াশোনার জন্য তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধ
‘বিএনপি করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারকে দোষারোপ করছে’-এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপির কাজ হচ্ছে সমালোচনা করা। বিএনপি এই করোনা ভাইরাস নিয়ে জনগণের জন্য কি করেছে? তারা শুধুমাত্র ভুল খুঁজে বেড়ানোর রাজনীতিটা করছেন। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে বলবো, এ ব্যাপারে একটু পড়াশোনা করার জন্য। কারণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তকে সাথে সাথে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। সংক্রমিত হওয়ার ১৫ দিন পরে তার দেহে করোনা ভাইরাস আছে কি-না সেটি নির্ণয় সম্ভব হয়। সুতরাং বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে সমস্ত ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও বিদেশ থেকে আসা বাঙ্গালিরা স্ক্রীনিং এর মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করলেও সাথে সাথে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, পরবর্তীতে তাদের দেহে সেটি পাওয়া গেছে, যেটি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, ইটালিসহ পৃথিবীর উন্নত দেশ, যারা কারিগরি এবং মেডিকেল সায়েন্সের দিক দিয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং সমৃদ্ধ, অর্থনৈতিক সক্ষমতাও আমাদের চেয়ে অনেক বেশি, সমস্ত প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে পারেনি জানিয়ে ড. হাছান বলেন, আমাদের দেশে সরকার সময়োচিত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে ১০০টি দেশ আক্রান্ত হওয়ার পর আমাদের দেশ আক্রান্ত হয়েছে। মাত্র ৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আজকে এই বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় রাজনৈতিক বাদানুবাদ না করে বরং সবাই একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
‘আমাদের দেশে আমরা এখনও পর্যন্ত এই দুর্যোগ ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আমরা ¯্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, যেন আমাদের দেশে এই দুর্যোগ কোনভাবেই আর না ছড়ায়। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্দেশনা দিয়েছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জনগণের পাশে থাকবে।’
‘পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরাই দলের নেতৃত্বে থাকবেন’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি একদিকে যেমন দেশ পরিচালনা করছেন, সরকার পরিচালনা করছেন, অন্যদিকে তিনি দলের প্রতিটি বিষয় নিয়ে খোঁজখবর রাখেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাই হচ্ছেন আমাদের দলের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। সেকারণেই আজকে আমরা পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এ দীর্ঘ সময়ে যে সমস্ত সুযোগসন্ধানী এবং সুবিধাবাদী দলের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে, দলকে তাদের থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘দলের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরাই দলের নেতৃত্বে থাকবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল, সবাই এ দল করতে পারে, সমর্থন করতে পারে, কিন্তু সবাই এই দলের নেতৃত্বে আসতে পারে না। নেতৃত্বে তারাই আসবেন, যারা দল এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থাশীল। যারা দলের সুসময় এবং দুঃসময় সবসময়ে দলের জন্য অবিচল কাজ করবে এবং একইসাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল থেকে কাজ করবে, তারাই দলীয় নেতৃত্বে থাকবেন। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদকও বারংবার বলেছেন, যারা মাদক বা জমি দখলের সাথে যুক্ত, যারা চাঁদাবাজ তারা নেতৃত্বে থাকবে না।’
ড. হাছান মাহমুদ জানান ‘বুধবার সকালে সম্পাদকমন্ডলীর সভায় দলের সিদ্ধান্তের কথা আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক আমাদের জানিয়ে গেছেন। মার্চ মাসে আমরা আর সম্মেলন করবো না। একইসাথে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রমজান শুরু হবে বলে এপ্রিল মাসেও আমরা ব্যাপক জনসমাবেশ করে সম্মেলন পরিহার করবো। তবে দলের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আর কয়েকদিন পরেই জাতির পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ১৭ মার্চ। এ উপলক্ষে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে সমস্ত জনসমাগমসম্পৃক্ত কর্মসূচিগুলো আপাতত স্থগিত করেছেন। কোনো কর্মসূচি বাতিল করা হয় নাই। আমরা পুর্নবিন্যাস করতে যাচ্ছি। জনসমাগম হবে এমন দলীয় কর্মসূচিগুলোও আমরা স্থগিত করেছি, পরবর্তীতে এগুলো সুবিধাজনক সময়ে পালিত হবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, নাটোর জেলার আওয়ামী লীগ সভাপতি মো: আব্দুল কুদ্দুস এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, মো: শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি, দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ নাটোর জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সভায় যোগ দেন।