করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্যদের পিপিই পরতে নিষেধ করেছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার গণভবন থেকে ৬৪ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় হেসে মজা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিপিই সবার জন্য না। শুধুমাত্র যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা করবে তাদের জন্য। আর এটা দরকার আমাদের নার্সদের জন্য, ডাক্তারদের জন্য। এখন সবাই যদি পরে বেড়াবে তাহলে সবাইকে পাঠায় দিবো রোগীর সেবা করতে। এখন যাকেই পরা দেখব তাকেই রোগীর সেবা করতে পাঠায় দিবো। তা ছাড়া কি করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘পিপিই সাধারণ কারও ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু এখন দেখি অনেকেই যত্রতত্র এটা পরে বেড়াচ্ছেন। এটা কেন পরে বেড়াচ্ছে আমি ঠিক জানি না। তবে আমি মনে করি এটা ভালোভাবে প্রচার করা দরকার। ঘরে-বাইরে, সাধারণ কাজ যারা করবে তাদের এসব পরার প্রয়োজন নেই। তারা এমনিতে একটা গাউন পরে নিতে পারে। কাপড় দিয়ে বানাবে, ধোবে আবার ব্যবহার করবে।’
‘রোগীর সেবা যারা করছে তারাই পিপিই পাচ্ছে না কিন্তু ঘরে-বাইরে সবাই এটা পরে ঘুরে বেরাচ্ছে। আমার মনে হয় এটা থেকে বিরত রাখা একান্তভাবে দরকার’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
পিপিই পরার নিয়াবলি নিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোন ড্রেস কোন সময় পরতে হবে এ সংক্রান্ত লিফলেট দিয়ে প্রচারণা দরকার। যারা পরতে চায় তারা ডাক্তারদের মতো গাউন পরতে পারে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটি ক্রান্তিকালে এই ভিডিও কনফারেন্স করছি আমরা। এরকম পরিস্থিতি বোধহয় আমরা জাতীয় জীবনে আর কখনো দেখিনি।’ দরিদ্র মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথাও বলেন তিনি। সেইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
জনগণের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সরকার মুজিববর্ষসহ সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে। যাতে মানুষ সমাগম কম হয় তার জন্য এটা করা হয়েছে।’
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জনগণকে সচেতন করা। সেটা আমরা করতে পারলেও তিন মাসে আমরা এই অবস্থা ধরে রাখতে পেরেছি। সবাই নিজেদের জায়গা থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করেছেন বলেই এটা পেরেছি। আমরা বিমানবন্দর-নৌবন্দরে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছি। থার্মাল স্ক্যানারসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
রাজশাহীর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই শহরে আপনারা ভালো ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেই রাজশাহীতে কোনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। এটা খুব ভালো লক্ষণ। এটা অত্যন্ত সুখবর যে এ বিভাগে কোনো করোনা রোগী নেই। এ জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই।’ তারপরও সচেতন থাকার জন্য তিনি সেখানকার প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
সিলেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে ২৬ হাজার লোক বিদেশ থেকে এসেছে তারপরও সেখানে কোনো করোনাভাইরাসের রোগী নেই। এটা একটা আশার খবর।’ তিনি চা শিল্পে উৎপাদন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করারও আহ্বান জানান।