করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান সংকট মোকাবেলায় জিডিপির তিন শতাংশ অর্থাৎ ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনা ঘোষণার দাবি করেছে বিএনপি।
আজ শনিবার (৪ এপ্রিল) সকালে গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চলমান সংকট মোকাবেলায় সরকার এরইমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলো এই সংকট নিরসনে যথেষ্ট নয় বলে আমরা মনে করি। এ জন্য জিডিপর তিন শতাংশ অর্থাৎ ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
ফখরুল আরো বলেন, করোনা সংকট কেবল জীবনের জন্য ঝুঁকি নয়, অর্থনীতির জন্যও তা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়বে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। সেজন্য আমরা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব রাখছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনা সংক্রমণ কেবল বৈশ্বিক মহামারির সৃষ্টি করেছে তা নয়, এতে বিশ্বজুড়ে এক মহাঅর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কোরিয়াসহ অনেক রাষ্ট্র করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের মুখে স্ব-স্ব জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বড় অর্থনৈতিক রিকভারি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, করোনার আঘাত আসার আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর, নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যাংকিং খাত। লাখো-কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ। পরিচালক ও ব্যাংকার মিলেমিশে ব্যাংক লুট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল অর্থ লোপাট, মেগাপ্রকল্পের প্রকল্প ব্যয় অযথা বৃদ্ধিসহ নানা উপায়ে বিরাট অঙ্কের দুর্নীতি, প্রতিবছর লাখো-কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিদেশে পাচারসহ আকণ্ঠ দুর্নীতি উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। এখন তা আরো ঘনীভূত হবে। আমদানিও নিম্নমুখী। রেমিট্যান্স প্রবাহ জানুয়ারিতে নেমে গিয়েছিল ২.৬ শতাংশে।
ফখরুল বলেন, অর্থনীতির অন্যতম সেক্টর পুঁজিবাজার ইতিহাসের সর্বনিম্ন সূচকে নেমে এসেছে। বেকারের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। দারিদ্র্য হ্রাসের হার দ্রুতগতিতে কমে যাচ্ছে। রাজস্ব সংগ্রহে ভাটা চলছে। সারা বছর যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংক খাত থেকে নেওয়ার কথা, প্রথম চার/পাঁচ মাসেই তার চেয়ে অধিক অর্থ সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। বিনিয়োগের ধারা ঋণাত্মক পর্যায়ে নেমে এসেছে। এককথায় গোটা অর্থব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানের বৈষম্যমূলক তথাকথিত উন্নয়ন, সুশাসনের অভাব এবং আইনের শাসনের অভাবের ঠিক এই সময়ে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের ছোবল। এই মহামারি থেকে বেরোতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যেকোনো গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে সরকারকেই এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা এই মহাদুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।