ত্রাণ নিয়ে এবার আরও ভয়ঙ্কর দলীয়করণ ও লুটপাটের মহামারি শুরু হতে যাচ্ছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, সারাদেশে ত্রাণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ত্রাণের তালিকা করবে। এটি স্থানীয় প্রশাসনকে দেবে। স্থানীয় প্রশাসন তালিকাটি যাচাই-বাছাই করবে।’ তার মানে এই তালিকায় কেবল আওয়ামীলীগ করা লোকজনের ঠাঁই হবে। ত্রাণ পাবে তারাই। আমরা এ বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও আশঙ্কা বোধ করছি যে. ত্রাণ কার্যক্রমে এই দলীয় কমিটির কারণে চাল চুরি আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, দলীয় তালিকা করে দলের লোকজন খাবে আর অন্যরা না খেয়ে মরবে। এটা হলে দুর্ভিক্ষ আরও তরান্বিত হবে বলে আমরা মনে করি। অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে দিয়ে ত্রাণের তালিকা করার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিশ্ববাসী আজ দিশেহারা। বাংলাদেশে বিরাজ করছে ভয়াল পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও হেয়ালিপনার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে প্রতিদিন দেশজুড়ে বিস্তার ঘটছে এই মহামারির। বিশ্বের ভয়াবহ সংক্রমিত দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে ১৫-২০ দিনে। আর বাংলাদেশে তা হচ্ছে মাত্র চার দিনে। করোনা প্রতিরোধে মেডিকেল সরঞ্জামের বিষয়ে কেউ যেন কথা বলতে না পারে সেজন্য গতকাল সরকার কঠোর পরিপত্র জারি করেছে। সরকার তাদের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে দমনের নীতিকেই কার্যকর করছে।
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা এখন পর্যন্ত কেউ অনুধাবন করতে পারছে না। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে জনগণ জানতে পারছে না আসলে হচ্ছেটা কী? অথচ দুনিয়াজুড়ে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বলছেন- এই সংকটে আলাপ-আলোচনার পথ প্রশস্ত রাখার জন্য। করোনার কারণে ভয়ঙ্কর খাদ্য সংকট প্রতিকারের জন্য মুক্ত আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। অথচ সরকার নিয়ন্ত্রণ আর হুমকির মুখে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত রেখেছে। সরকারের ভুল বা ব্যর্থতা ধরিয়ে দেয়া চক্রান্তের অংশ নয়, বরং তা গণতন্ত্রের অংশ।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘করোনাভাইরাস ইস্যু’ নিয়ে জনগণের সঙ্গে লুকোচুরি করার মানে হচ্ছে, মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলা। জনগণের জীবন নিয়ে জুয়া খেলবেন না। আমরা দেখলাম, সরকার ১৬ এপ্রিল সারাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। ‘সারাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ এটি বুঝতে সরকারের কেনো এত দেরি হলো এটি বোধগম্য নয়। কিন্তু মানুষ বাঁচাতে হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
রিজভী বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিনিয়ত মাঠে থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু কই মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন নেতাদের তো জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেখছি না। কই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তো কোনো হাসপাতাল পরিদর্শনে যেতে দেখিনি। উল্টো দেখা যাচ্ছে সরকারি ত্রাণ চুরির মহোৎসব। ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের বাড়িতে চালের খনির পর এখন তেলের খনির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন কিংবা ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা অপরিহার্য। কিন্তু ‘লকডাউন’ কিংবা ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে গিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। এই অবস্থায়, গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণের চাল বরাদ্দ, ওএমএস কর্মসূচি কিংবা কমদামে ‘টিসিবির মাধ্যমে তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু কোনো গণবিরোধী সরকার ও প্রশাসনের হাতে পড়লে যে কোনো শুভ উদ্যোগও ‘কলঙ্কজনক’ হয়ে ওঠে।
রিজভী আহমেদ বলেন, দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। এর মধ্যেও রোগীদের চিকিৎসায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়নি। রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল প্রস্তুতির যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেখানেও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিবর্তে নির্বাচন করা হয়েছে আউটডোর ক্লিনিক। সেখানে অক্সিজেনের সুবিধা পর্যন্ত নেই, নেই অপারেশন থিয়েটার। গতকাল সরকারি হিসেবে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। ফলে সরকারি হিসেবে ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন আরও ২৬৬ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৩৮ জনে। কিন্তু বেসরকারি হিসেব মতে ও গণমাধ্যম সূত্রমতে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশে প্রথম রোগী চিহ্নিত হয় ৮ মার্চ। তারপর সরকার রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় পেলেও রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, করোনার রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউতে ভেন্টিলেটর মেশিন ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের সুবিধাসহ পৃথক হাসপাতাল স্থাপন করতে পারেনি। এখন চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় বাড়ছে রোগীদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুহার। মূলত সারা বাংলাদেশে করোনার কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না, চারিদিকে মানুষের কেবলই আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।