বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘পৃথিবী বদলাচ্ছে, মূল্যবোধ বদলাচ্ছে, ভাষা বদলাচ্ছে, শব্দ বদলাচ্ছে, কিন্তু ক্ষমতাসীনদের সংস্কৃতি বদলাচ্ছো না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব এই ভয়ঙ্কর বিশ্বব্যাপী মহামারীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোকাবেলার কথা বলছেন কিন্তু তারা সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের একদলীয় চেতনা নিয়ে তারা কাজ করছে। কাজ করতে গিয়ে আজকে অনেক তথ্য, অনেক কিছু গোপন করার কারণে করোনা ভাইরাস মানুষের মৃত্যু লাফিয়ে বেড়ে চলছে।’
শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঈদ উপহার দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘যখন করোনা মহামারী দেখা গেল। তার বেশ কিছু পরেই আমরা জানি না, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছ থেকে জানছি ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের তো জানার কথা কি কি পদক্ষেপ নিলে এই মুহূর্তে আমরা এটাকে প্রতিরোধ করতে পারব। যেমন ভিয়েতনাম নিয়েছে, অন্যান্য দেশ নিয়েছে। চীনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সেখানেই করোনা মহামারী বিস্তার লাভ করতে পারেনি। আমাদেরও সেই সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকার ভিন্ন কাজে ব্যস্ত। অন্য কাজ দেখতে গিয়ে এটাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।’
রিজভী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে জনজীবন অতিবাহিত হচ্ছে। আমাদের জীবদ্দশায় এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনও হইনি। আমরা আমাদের জীবদ্দশায় একটি যুদ্ধ দেখেছি ১৯৭১ সালের দেশে মুক্তিসংগ্রামের যুদ্ধ। যেকোনও ধরনের মহামারী সম্পর্কে আমরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে গল্প শুনেছি।’
‘কলেরায় গুটিবসন্তে গ্রামকে গ্রাম সাফ হয়ে গেছে। এগুলো আমরা দেখিনি। আমরা যখন সচেতন হয়ে উঠছি, জ্ঞান হয়েছে তখন আমরা দেখেছি বিভিন্ন ডিস্ট্রিকে ডিস্ট্রিকে ম্যালেরিয়া ডিপার্টমেন্টের অফিস। তারপর কিছুদিন পরে দেখছি সে অফিসগুলো নেই, অর্থাৎ ম্যালেরিয়া নির্মূল হয়ে গেছে। আমাদের জীবদ্দশায় এইবার দেখলাম, এটি কোন অঞ্চলের মহামারী নয়, এটি বিশ্বব্যাপী মহামারী। এর মধ্যে আমরা পতিত হয়েছি। কিন্তু এই রকমের পরিস্থিতির মধ্যেও দলের পক্ষ থেকে যে কাজ গুলো করা দরকার সাধারণ মানুষের পক্ষে সেটি যথা সাধ্যভাবে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠন করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে জীবনের ঝুঁকি আছে। সেই ঝুঁকিকে বরণ করে নিয়েও তারা কাজ করছে। আর সর্বোপরি যেটি সেটা হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিবার এই কাজটা করেন। গত ১০ বছরে আমাদের নেতা-কর্মীরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে, গুম খুনের শিকার হয়েছে। ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস সময় বিশেষ দিবসগুলোতে রমজানে এগুলোতে তাদেরকে উপহার সামগ্রী পাঠান। এবারও রমজান উপলক্ষে প্রতিটা বিভাগে যারা গুম হয়েছেন, ক্রসফায়ারে জীবন চলে গেছে পুলিশী নির্যাতনে যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর পক্ষ থেকে এই উপহার সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘এরমধ্যে এই লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর মধ্যেও যতোটুকু সম্ভব যারা এর পেছনে কাজ করেছেন তারা দিনরাত চেষ্টা করে তারা তালিকা করেছেন এবং তাদেরকে উপহার সামগ্রী পাঠানোর জন্য সার্বিক ব্যবস্থা করেছেন। এটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহাসচিব মহোদয় শুরু হল আজকে। আগামীকাল কয়েকটি বিভাগের এবং আগামী পরশু দিন অন্যান্য বিভাগ গুলোতে দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন একটা পরিস্থিতির সাথে আমাদের আগে কখনো পড়তে হয়নি। না শব্দগত দিক থেকে, না পরিবেশগত দিক থেকে। এই লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্স এগুলো আমাদের অপরিচিত শব্দ ছিল। এখন নতুন করে আমরাই শব্দগুলোকে জানছি এবং চিরদিনের যে মূল্যবোধ আমাদের ছিল, মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এখন সেগুলো বলতে পারছি না, মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রীতির যে ব্যাপার গুলো ছিল সেগুলো পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা থেকে আমাদের মানুষের দূরে থাকার কথা বলতে হচ্ছে।’
‘মুখোশ ছিল নেতিবাচক শব্দ। সেই মুখোশকে এখন ইতিবাচক হিসেবে নিতে হচ্ছে। কারণ এই মুখোশের মাধ্যমে আমরা এই অণুবীক্ষণি জীবাণু থেকে আমরা বাঁচবো। এইযে আমাদের একটা নতুন জগৎ, নতুন পৃথিবী, নতুন জগৎ, নতুন পৃথিবীর মধ্যে আমাদেরকে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এর সাথে আমাদেরকে যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে, লড়াই করে আমরা কোন জায়গায় উপনীত হব সেই ভবিষ্যদ্বাণীও করা যাবে না। কিন্তু আমি যে কথাটি বলবো, এর মধ্যে মানুষ তারা তাদের যারা মানবতা বাদী মানুষ, যারা দুস্থ মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রত্যয় আছে তারা কিন্তু কাজ করছে।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা যখন দেখছি খাটের নিচ থেকে, মাটির তলা থেকে, আমরা যখন দেখছি খড়ের পালা থেকে চালের বস্তা বের হচ্ছে, তখন আজকে আমার অনেক ভালো লাগলো অনলাইনে যখন দেখলাম যে কর্নাটকে দুটি মুসলিম যুবক তাদের জমি বিক্রি করে ২৫ লাখ টাকা তারা সেখান থেকে পেয়েছেন, ওই টাকা থেকে দিনরাত মানুষজনদের খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছে। এই দৃষ্টান্ত এই দেশেও আছে। অনেক মানুষ হয়তো এই কাজটা করছে কিন্তু এত বড় বিষয় আমাদের চোখের সামনে এসেছে পাশাপাশি এই গুলো দেখছি যে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বাড়ি থেকে চালের বস্তা, ত্রাণের বস্তা বের হচ্ছে। সাংবাদিকরা প্রোটেস্ট করছেন সেই সাংবাদিকদের ধরে উত্তম মাধ্যম দিচ্ছেন তারা।’
ছাত্রদলের নিহত তিন পরিবার যথাক্রমে নুর আলম, নুরজ্জামান, ও মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর পরিবারের হাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঈদ উপহার তুলে দেয়া হয়। সারাদেশে গুম-খুন-নির্যাতনে নিহত সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীর পরিবারের কাছে এই উপহার পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।
দলের নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজ উদ্দিন নসু, ইশরাক হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আতিকুর রহমান রুমন, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসীন আলী প্রমুখ।