আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পলিটিক্স নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতি ঘরে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব না আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে আলাল বলেন, ‘আমু ভাই, তোফায়েল ভাইদের ঠাঁই নেই। আজকাল সব জায়গা আমলা নির্ভর। মুজিববর্ষ থেকে শুরু করে ত্রাণ সমন্বয় কমিটি সব জায়গায় সচিবরা। কারণ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রীর অবিশ্বাস খণ্ডন করানোর জন্য আমু ভাই এসব কথা বলছেন।’
তিনি বলেন, পল্লী বিদুৎ সমিতি, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা যদি ঘরে ঘরে গিয়ে বিল করতে পারে, কিস্তি আদায় করতে পারে তাহলে সরকার ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছাতে পারবে না কেন? পল্লী বিদ্যুৎ বা এনজিওগুলোর চেয়ে তো সরকার আরও বেশি শক্তিশালী।
ধান ক্ষেতের রাজনীতি প্রসঙ্গে আলাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আগেই আমাদের ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এটা দেখে ভাবছেন হয়তো আওয়ামী লীগ পেছনে পড়ে যাচ্ছে। তাই তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কৃষকের ধান কেটে দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগ নেতারা কৃষকের ধান নষ্ট করছেন। কৃষকরা বলছেন, উনারা ছবি তুলতে এসে ধান নষ্ট করছেন, ছবি তোলা হয়ে গেলে চলে যাচ্ছেন। আমার কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে পারেনি তাদের ছবি তোলার জন্য। এখন এই বাড়তি টাকা আমি শ্রমিকদের কীভাবে দেব?’
করোনা মোকাবিলায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট গ্রহণ না করা ও সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘সরকার প্রথম থেকেই গোয়ার্তুমি করছে। মানুষের জীবন নিয়েও তারা রাজনীতি করছে। মানুষ মরে মরুক, কিন্তু তাদের থেকে ভিন্নমত পোষণকারীদের কৃতিত্ব দেয়া যাবে না- এই নীতিতে চলছে সরকার। অর্থাৎ মানুষের জীবন নিয়েও তারা রাজনীতি করে। আপনি দেখবেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব বলেছেন কিট তৈরি করার পর প্রথমে সরকারের বিভিন্ন মহলে জানিয়েছেন এবং তারা অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তারা উপস্থিত হচ্ছেন না। বাংলাদেশের মতো দেশে এরকম একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার একজন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে, আওয়ামী লীগের ভিন্নমত পোষণকারীর পক্ষ থেকে আবিষ্কার হোক সেটা আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারে না বলেই এই অসহযোগিতা করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যেখানে দেশের মানুষের জীবন-মরনের প্রশ্ন সেখানে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ এই শাসক দল যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, মানবতার কথা বলে তখন খুব কষ্ট লাগে আমাদের।’
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দেয়ার প্রসঙ্গে আলাল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রথম থেকে লক্ষ্য করবেন, আর্থিক কিংবা অন্য যত ধরনের সুবিধা দিয়েছে সরকার, সবগুলোই বিত্তবানদের জন্য। যারা ব্যাংকার তারাই গার্মেন্টসের মালিক, যারা ঋণ খেলাপি তারা গার্মেন্টসের মালিক, যারা ব্যাংকের টাকা মেরে ব্যাংকের লালবাতি জ্বালিয়েছে সে ধরনের অনেকেই আছে ব্যাংকের মালিক, আবার গার্মেন্টসের মালিক। আর সেই লোকগুলোই প্রণোদনা পাচ্ছে। অথচ যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দিন আনে দিন খায় তাদের ঘরে ঘরে যদি সরকার এনআইডি কার্ড পৌঁছে দিতে পারে, তাহলে তাদের খাবার পৌঁছে দিতে পারবে না কেন- এটা আমাদের প্রশ্ন। এ সরকার কি শুধু ধনীদের পৃষ্ঠপোষক?’
তিনি বলেন, ‘যারা গার্মেন্টসে চাকরি করে তারা নিতান্তই গরিব মানুষ। মাসের বেতনটা না পেলে তাদের পেট চলবে না। সুতরাং তারা জীবনের ঝুঁকি নেবেই। ক্ষুধার কাছে পরাজিত হবেই। এই শ্রমিকদের যদি দুই বা তিন মাসের মজুরি গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়, তাহলে কি গার্মেন্টস মালিকরা পথে বসে যাবে? একজন মালিকও পথে বসবে না। কিন্তু সেই কাজটি মালিকরা করছে না। আর তাদের সেই পথে নেয়ার কোনো কাজও সরকার করছে না। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো খুলে শুধু যে পোশাক শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে তা নয়, আসা-যাওয়ার মধ্যে তারা যাদের সংস্পর্শে আসবে তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এখন যা ইচ্ছা তাই করছে। যে কারণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট নেয়া হয় না। ড. ইউনুসের ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা, দারিদ্র্য মোচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয় না। বারবার দেশ পরিচালনাকারী দল-বিএনপির পরামর্শ নেয়া হয় না। অপরদিকে যারা ত্রাণ চুরি করছে তাদেরকে শোকজ করা হচ্ছে। আর দু-একজন যারা এদিক ওদিক করছে তাদেরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। বাকিদের শুধু শোকজ করা হচ্ছে। কারাদণ্ড দিচ্ছে, কিন্তু তার পরের দিনই জামিন হয়ে যাচ্ছে। তাদের জামিনের জন্য আবার এমপিরাও আদালতে হাজির হচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটি তুঘলকি কারবার চলছে। অনাচার, অবিচার ও জনগণের বিরোধী এরকম একটি সরকার স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যেও আর কখনও আসেনি।’